নড়াইলের লোহাগড়ায় মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে সংগঠিত সহিংসতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনেকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার বিকেলে লোহাগড়া আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোরশেদুল আলম এর আদালতে লোহাগড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক শুনানী শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো, রাসেল মৃধা (৩৮), কবির গাজী (৪০), সাঈদ শেখ (৫৫), রেজাউল শেখ (৪০) ও মাসুম বিল্লাহ (৩০)। আসামীদের আদালত থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগামীকাল থেকে তাদের তিনদিনের রিমান্ড কার্যকর হবে।
লোহাগড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির জের ধরে উপজেলার দিঘলিয়া বাজার ও সাহাপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দোকান, বাড়ি, মন্দির ভাংচুর ও একটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গতকাল রোববার অজ্ঞাত ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামী করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়া এলাকায় হামলা ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইচ চেয়ারম্যান ও খুলনা -০৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ। সোমবার(১৮ জুলাই) দুপুরে তিনি দিঘলিয়া বাজারের ক্ষতিগ্রস্থ দোকান, সাহা পাড়ার বাড়িঘর ও মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এসময় জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুন্ডু, বাধাঘাট পুজা কমিটির সভাপতি অসিম কাপুড়িয়া সহ বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটেগেছে তা অত্যান্ত মর্মান্তিক। এটাকে ওভারকাম করতে হলে আগে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্থানীয় ভাবে যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতার দরকার আছে। তারা পাশে থেকে তাদের মনবল ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
এছাড়া গতকাল ১৭ জুলাই রবিবার বিকালে হামলা ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সময় সঙ্গে ছিলেন -গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া গোবিন্দ সাহার পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন জাফরুল্লা চৌধুরী।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৫ জুলাই) দিঘলিয়া সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা অশোক সাহার ছেলে কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে বিরুপ মন্তব্যে করেন। বিষয়টি জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন দুপুরে অভিযুক্ত আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। ঘটনার জেরধরে বিকেল থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে এলাকার দিঘলিয়া বাজারে ৩/৪টি হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকান ভাংচুর করে ও সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহাসহ ৪-৫ টি বাড়ি ভাংচুর করে। এর মধ্যে গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ভাংচুর করে বিক্ষুদ্ধরা।
খুলনা গেজেট / আ হ আ