সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি। মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসুচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন শেষে একই দাবিতে ১০ হাজার ৮৮৭ জনের গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।
জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, এড. আবুল কালাম আজাদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকী, আনোয়ার জাহিদ তপন, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, এড. আল মাহামুদ পলাশ, কমরেড আবুল হোসেন, নিত্যানন্দ সরকার, প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, শফিকুল ইসলাম, এড. কাজী আব্দুল্লাহ আল হাবিব, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, পিন্টু বাওলীয়া, পরিতোষ বৈদ্দ, মনোরঞ্জন ব্যনার্জি, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এখনো অনেক স্থানে মানুষের বাড়ি ঘর রাস্তা-ঘাটে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হচ্ছে। হাটু পানি-কোমর পানিতে বসবাস করছে সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুর, ইটাগাছা, কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কিন্তু সমস্যা সমাধানে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তেমন কোন কাজে আসছে না।’
তারা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের নদ-নদীগুলোর সাথে এখানকার নদ-নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত্রতত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘের নির্মাণের কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে উপকুলের বিস্তীর্ণ এলাকা। একই সাথে পোল্ডারের ভিতরের পানি নিষ্কাশনের খাল গুলো লীজ প্রদান ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা এখন দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।’
বক্তারা উপকুলীয় এলাকা তথা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা নিয়ে সমীক্ষার পর একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার বলে জানান।
প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন শেষে বেলা ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১০ হাজার ৮৮৭ জনের গণস্বাক্ষরসহ একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবর প্রেরণকৃত স্মরকলিপিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সাতক্ষীরার উন্নয়নে ২১ দফা দাবি জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম