১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ বক্তৃতা করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জানালেন, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তবে তাঁর কনসারভেটিভ পার্টি যত দিন না নতুন নেতা নির্বাচিত করছে, তত দিন তিনিই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই থাকতে চান বলেও জানিয়েছেন বরিস।
নিজের ভাষণে বরিস বলেন, ‘‘এটা এখন আমার কাছে স্পষ্ট যে আমার এমপি-রা আমাকে দল বা দেশের নেতা হিসেবে দেখতে চান না।’’
বরিস জানান, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে যা যা কাজ করতে পেরেছেন সেজন্য তিনি গর্বিত। নিজের সফল কাজ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট, অতিমারির সময় সরকার চালানো এবং পুতিনের রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি সামলানোকে।
প্রসঙ্গত, বরিসকে যে সরে যেতে হবে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয় গত কয়েক দিনে সরকারের বিভিন্ন স্তরের মন্ত্রী ও এমপিদের লাগাতার ইস্তফার পর। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের ইস্তফার পর যাঁকে সেই পদে বসানো হয়, তিনিও বরিসের ইস্তফার দাবি করতে থাকেন। সরকারের বিভিন্ন স্তরের মন্ত্রী ও এমপি মিলিয়ে প্রায় ৫০ জনের ইস্তফার পর শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে সম্মত হন বরিস, বলে সূত্রের খবর। তারপরই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে অস্থায়ী পোডিয়ামে নিজের সরে যাওয়ার ঘোষণা করেন তিনি।
এদিকে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন আরও কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম, সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই ঋষি সুনক, প্রাক্তন লেভেলিং আপ সেক্রেটারি মাইকেল গোভ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মোরডন্ট, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী লিজ ট্রুস, ফরেন অ্যাফেয়ার্স চেয়ার টম টুগেনঢাট, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, বর্তমান অর্থমন্ত্রী নাধিন জাহাউয়ি।
এ ছাড়াও প্রাক্তন মন্ত্রী জেরেমি হান্ট ও সাজিদ জাভিদ— দু’জনেই আগের বার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। তাই তাঁরা এবারও দৌড়ে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু কিভাবে কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন? যিনি ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রার্থী বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে। দলের অন্তত আট জন এমপির সমর্থন থাকলে একজন প্রধান নেতা হিসেবে আগ্রহী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবেন।
যদি তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকেন তাহলে তিনি সরাসরি দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
যদি মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা দুই জন হয় তাহলে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের একজনকে নেতা নির্বাচিত করবেন।
কিন্তু মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা দুইয়ের অধিক হলে প্রক্রিয়াটি একটু দীর্ঘ হবে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্বের দুই প্রার্থীকে বেছে নিতে দলের এমপিরা ভোট দেওয়া শুরু করবেন। প্রথম পর্বের ভোটে ১৮ জনেরও কম এমপির ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়বেন।
দ্বিতীয় পর্বে যে প্রার্থী ৩৬ এর কম ভোট পাবেন তিনি ছিটকে যাবেন। এরপরও প্রার্থী তিন বা ততোধিক হলে এদের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া জন বাদ পড়বেন। তারপর থেকে প্রার্থীর সংখ্যা দুই জনে দাঁড়ানো না পর্যন্ত এমপিদের ভোট দেওয়া চলতে থাকবে আর সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ পড়তে থাকবেন।
চূড়ান্ত যে দুই প্রার্থী থেকে যাবেন তাদের মধ্যে একজনকে নেতা হিসেবে বেছে নিতে কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে ভোট হবে। পোস্টাল ভোটে যিনি বেশি সমর্থন পাবেন তিনিই দলটির পরবর্তী নেতা হবেন।
নেতা নির্বাচন শেষে ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। রানীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্বাচিত নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন।