আর্থিক ও স্থান সংকটে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা । খুলনার শেখ পাড়া চামড়া পট্টি শুধু নামে আছে। নেই চামড়ার কোন দোকান। এখান থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। নির্ধারিত স্থান না থাকায় ব্যবসায়ীরা ঈদুল আজাহার সময় এখানে রাস্তায় দাড়িয়ে সংগ্রহ করেন চামড়া। আর তাতে চামড়া রাখা প্রক্রিয়াজতকরণ সহ নানান সমস্যায় পড়তে হয়। অপরদিকে রয়েছে আর্থিক সংকট। ট্যানারী মালিকদের কাছে পাওনা বকেয়া এখনো পায়নি। টাকা না পেলে চামড়া কিনতে না পারার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা।
খুলনার শেখ পাড়া শেরে বাংলা রোড়স্থ চামড়া পট্টি হিসেবে পরিচিত। অর্ধশতাধিক চামড়ার দোকান ছিল এক সময়ে। খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের চামড়া বেচা কেনা হতো এখানে। এখান থেকে রাজধানীর ট্যানারী মালিকারা চামড়া কিনতেন। এই এলাকা জনবহুল হওয়ায় প্রশাসনের চাপে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। চামড়া পট্টির শেষ দোকানটি বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। বর্তমানে সেখানে একটিও চামড়ার দোকান নেই। সারা বছর কসাইখানা থেকেই চামড়ার কেনাবেচা চলে। বিভিন্ন মাংসের দোকানে স্বল্প পরিসরে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু কোরবানির ঈদে সংগৃহীত বিপুলসংখ্যক চামড়া সেখানে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এদিকে গল্লামারীতে চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত স্থান দেওয়ার কথা দিয়েছিল খুলনার প্রশাসন। কিন্তু সেই কথা রাখেনি। গত এক যুগেও চামড়া ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য নির্ধারিত স্থান পাননি। নির্ধারিত স্থান না থাকায় ভ্রাম্যমাণভাবে চামড়া সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসার মৌসুম ঈদুল আজহা। আর এই সময়টিতে ঈদের তিন দিন এখানে রাস্তায় দাড়িয়ে চামড়া ক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা। এতে চামড়া প্রক্রিয়ায় বেশ সমস্যা হয়। এর পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যায় চামড়া।
এ ব্যাপারে চমড়া ব্যবসায়ী মোঃ বাবর আলী জানান, নেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নির্ধারিত স্থান। রাস্তায় দাড়িয়ে চামড়া কিনতে হয়। স্থান না থাকায় চামড়া কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করতে করতে ৫০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যবসায়ী মোঃ জাফর বলেন, প্রশাসন কথা দিয়েছিল গল্লামারীতে চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত স্থান করে দেবে, কিন্তু তা দেয়নি। একেতো নেই স্থান, তার ওপর পুঁজি সংকট। ট্যানারী মালিকদের কাছে খুলনার ব্যবসায়ীদের দেড় কোটির বেশী টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা না পেলে চামড়া কিনতে পারবে না তারা।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, ট্যানারী মালিকদের নিকট বকেয়া পাওনা রয়েছে। প্রতিদিনই আশ্বাস দেয় টাকা দেবে। কিন্তু টাকা দেয় না। এই টাকা না পেলে চামড়া কেনা সম্ভব নয়।
খুলনা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম ঢালী বলেন, ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত স্থান নেই। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে চামড়া কিনতে হয়। রাস্তায় চামড়া কেনার পর চামড়া রাখা ও লবন দেওয়াসহ প্রক্রিয়াজাত করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এতে অর্ধেক চামড়া নষ্ট হয়। নির্ধারিত স্থানের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেও স্থান পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ব্যবসায়ীদের টাকা বাকী রাখা ট্যানারী মালিকদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হাজার বার তাগাদা দিলেও টাকা পাওয়া যায় না। সামনে ঈদে এখনো বকেয়া পাওয়া যায়নি। টাকা না দিলে চামড়া কিনবো কিভাবে?
অপরদিকে খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, শেখ পাড়া চামড়া পট্টি ছিল। স্থানটি জনবহুল হওয়ায় এখানে বর্তমানে চামড়া ব্যবসা হয় না। তবে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অপরদিকে পাওনার বিষয়ে বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানিকভাবে জানালে প্রশাসন ট্যানারী মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।
খুলনা গেজেট /এমএম