চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটি ২৫৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটি তদন্তে মালিকপক্ষসহ তদারকি সংস্থাগুলোর গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার (৬ জুলাই) বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এ সময় মিজানুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুরে অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি ফায়ার সার্ভিস, ডিপো কর্মকর্তা ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, যেসব কন্টেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেগুলো রপ্তানির জন্য সিলড করা হাইড্রোজেন পারক্সাইড বোঝাই ছিল।
বিএম ডিপোর এমডি মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক মুজিবুর রহমানকে কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে। কমিটি তদন্ত কাজ করতে গিয়ে সর্বমোট ২৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ব্রি. জেনারেল (অব.) জিয়াউল হায়দার ও বিএম ডিপোর জিএম (মার্কেটিং) নাজমুল আখতার খানকে ডাকা হলেও তারা আসেননি।
তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান বলেন, বিএম ডিপোর নমুনা সিআইডির ল্যাবসহ তিনটি ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। সবকিছু পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়াসহ কিছু লিমিটেশন ছিল তদন্ত কার্যক্রমে।
বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষের দায় রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, আমার ঘরে আগুন লাগলে দায়টা আমারই বেশি। কিন্তু আশেপাশে প্রতিবেশী যারা আছেন তাদেরও দায় আছে। তদারকি সংস্থার দায় আছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সবারই দায় আছে।
তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি আজ। তবে কী আছে, তা পড়ে দেখিনি। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে সদস্য সচিব করে গঠন করা কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও পরে সময় বাড়িয়ে তদন্ত কমিটি এক মাস সময় নিয়ে আজ (বুধবার) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বিএম ডিপোর ঘটনা থেকে সতর্ক হয়ে ডিপোর জন্য সুনির্দিষ্ট ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আনারও সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ কন্টেইনার ডিপোর অনুমোদন, পরিচালনা এবং তদারকিতে ২৫টি সংস্থার ভূমিকা রয়েছে। সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়ের কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে। এতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডিপোর বিভিন্ন জায়গায়।
এ ঘটনায় প্রথম দুই দিনে দমকলকর্মীসহ ৪১ জন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকজনের মৃত্যু হয় এবং ডিপোতে কয়েকটি দেহাবশেষ পাওয়া যায়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।