বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের জিউধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর বাদশার বিরুদ্ধে দূর্নীতি, সরকারি অর্থআত্মসাত, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পরিষদের সদস্য ও চকিদারদের গায়ে হাততোলারও অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এসব অন্যায়ের বিচার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে পরিষদের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশাকে লিখিত জবাব দাখিলের নির্দেষ দিয়েছেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। শুধু ইউপি সদস্য নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর বাদশা দূর্ণীতি স্বজনপ্রীতি, সরকারি সম্পদ আত্মসাত, টিআর, কাবিখা ও কাবিটার কাজ না করে টাকা আত্মসাত করছেন। দীর্ঘদিন ধরে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, ভিজিডি কার্ড, মাতৃত্বকালীনভাতা প্রদান করে থাকেন তিনি। এছাড়া জন্ম, মৃত্যু সনদ, ট্রেডলাইসেন্সসহ পরিষদের যেকোন সেবার বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করেন। ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য শাহজাহান মৃধাকে মারধর ও দুইজন নারী ইউপি সদস্যকে গালিগালাজ করেছেন চেয়ারম্যান। পরিষদের কোন সভায় সদস্যদের কথা বলারও সুযোগ দেওয়া হয়না। এসব অন্যায়ের বিচার ও চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে ১৯ জুন লিখিত অভিযোগ দেয় আটজন ইউপি সদস্য।
ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা নিজের ইচ্ছেমত পরিষদ চালান। সদস্যদের সম্মানী ভাতা দেয়না এবং পরিষদের কোন সভায়ও ডাকে না আমাদের। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদত্ত কোন সেবার ক্ষেত্রে আমাদের কথা বলার কোন সুযোগ দেওয়া হয় না। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় প্রদত্ত কোন কার্ড বা ভাতা প্রদানেও আমাদের কোন গুরুত্ব দেয় না তিনি।
নারী ইউপি সদস্য মায়া মন্ডল বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে সৃজন স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ বালু দ্বারা ভরাটের জন্য বরাদ্দ ২ লক্ষ টাকা, সোনাতলা পঞ্চগ্রাম সম্মিলিত মন্দির মাঠ হতে বলাই পাইকবাড়ী অভিমুখে রাস্তা সংস্কার বাবদ ১ লক্ষ টাকা, মাদরাসাবাজার মোড় থেকে বাজার অভিমুখে রাস্তা সংস্কার বাবদ ৫০ হাজার টাকা, সোনাতলা পঞ্চগ্রাম শেবাশ্রম এর মাঠ বালু দ্বারা ভরাটের জন্য ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এসব প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি। এছাড়া নবনির্মিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের মাঠ ভরাট বাবদ সাড়ে ১২ টন চাউল এবং আলোকিত বাংলাদেশ কলেজ মাঠ বালু দ্বারা ভরাটের সাড়ে ১২ টন চাউল আত্মসাত করেছেন এই চেয়ারম্যান। দুটি মাঠে কোন বালু ভরাট হয়নি। লক্ষিখালী বাজার থেকে মোংলা অভিমুখের সড়কের জন্য বরাদ্দের টাকাও আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান।
৫নং ওয়ার্ড সদস্য শাহজাহান মৃধা বলেন, চেয়ারম্যান যে শুধু অর্থ আত্মসাত করেন তা নয়। সে আমার গায়েও হাত তুলেছেন। শুধু আমাকে নয়, তুচ্ছ ঘটনায় পরিষদের দায়িত্বপালনকারী অন্তত চারজন চকিদারকে মারধর করেছেন এই চেয়ারম্যান।
নারী ইউপি সদস্য মমতা রানী সরকার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের আমাদের কোন গুরুত্ব নেই। কোন সভায় আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না।কথা বললে গালিগালাজ করেন তিনি। এছাড়া পরিষদের কোন সুযোগ সুবিধা আমাদের দেওয়া হয় না। পরিষদে কোন কাজের বরাদ্দ আসলে সে তার ইচ্ছেমত ব্যয় করে, কখনও নামমাত্র কাজ করে, কখনও কাজ না করে আত্মসাত করেন তিনি।
শুধু ইউপি সদস্য নয়, স্থানীয়দেরও অভিযোগ রয়েছে জিউধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জেলে হারুণ মোল্লা বলেন, আমি সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। আমাকে সরকার একটি জেলে কার্ড দিয়েছে। এজন্যও চেয়ারম্যানকে ১৫শ টাকা দিয়েছি আমি। টাকা না দিলে কার্ড কেটে দিবে। শুধু হারুণ মোল্লা নয়, ইউনিয়নের ৩৭৬ জন জেলের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১৫শ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
জন্মনিবন্ধন, ট্রেডলাইসেন্সসহ পরিষদের যেকোন সেবা নিতে অতিরিক্ত টাকা গ্রহন ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর বাদশার বিরুদ্ধে।
ইমামুল হোসেন লিটন নামের এক ব্যক্তি বলেন, স্ত্রী, ছেলে ও আমার জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৮‘শ টাকা নিয়েছেন। এখন ডিজিটাল করার জন্য আবার ২‘শ টাকা করে চাচ্ছে। এত বেশি টাকা নিলে, আমরা কোথায় যাব।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে চকিদার মিলন হাওলাদার, লোকমান, রঞ্জিত ও মামুন চকিদারকে মারধর করেছে চেয়ারম্যান। এলাকার কোন মানুষ এই চেয়ারম্যানের কাছে নিরাপদ নয়। যার সাথে যা ইচ্ছে ব্যবহার করেন তিনি।
মোঃ আব্বাস নামের এক ব্যক্তি বলেন একটি জন্মনিবন্ধনের জন্য ৩‘শ টাকা দিতে হয়। আমরা এত টাকা কেন দিব। সরকারতো এত টাকা ফি নির্ধারণ করেনি।
লক্ষিখালী বাজারের ব্যবসায়ী মিল্টন ডাকুয়া বলেন, লক্ষিখালী বাজার থেকে মোংলা যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা। শুনেছি কয়েকবার সরকারি বরাদ্ধ হয়েছে, তারপরও কাজ হয়না। আমরা বাজারের ব্যবসায়ী, ভ্যান ড্রাইভার ও স্থানীয়রা টাকা উঠিয়ে কয়েকবার এই রাস্তা সংস্কার করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর বাদশা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করারজন্য এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আলোকিত বাংলাদেশ টেকনিক্যাল কলেজ মাঠ ও নবনির্মিত ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়নি। ভরাটের জন্য বরাদ্দকৃত চাউল তুলে রাখা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করা হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউপি সদস্যদের অভিযোগের বিষয়ে ২৯ জুনের মধ্যে চেয়ারম্যানকে লিখিত বক্তব্য জানাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের যেসব প্রকল্পের কাজ না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কাজ না করার প্রমান পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
খুলনা গেজেট / আ হ আ