পদ্মা সেতুর নাট খোলায় গ্রেপ্তার টিকটকার বায়েজিদের বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সোমবার সংবাদ সম্মেলন করবে। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসান রবিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর যন্ত্রপাতি নিয়ে অপকর্মে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার টিকটকারের বিষয়ে সোমবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এই সংবাদ সম্মেলন করবে।
এর আগে টিকটকার বায়েজিদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর বায়েজিদকে রোববার বিকেলে রাজধানী থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর টিকটকার বায়েজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যায়। পরে সংবাদ সম্মেলনের কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় সিআইডি।
এদিকে পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে নিয়ে টিকটক ভিডিও করা যুবক বায়েজিদ তালহার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। টিকটকে তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. বাইজীদ।
একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। বাইজীদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহনের নিকটাত্মীয় বলেও দাবি করছেন তারা।
তবে মোহনের দাবি, বাইজীদ তার আত্মীয় নন। তিনি (বাইজীদ) জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিলেন। বিপ্লব এখন যুবদল করেন।
জেলা ছাত্রদলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মোহনের সঙ্গেও বাইজীদ রাজনীতি করেছেন। তবে তার কোনো সংগঠনিক পদ ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাইজীদ ঢাকায় চলে যান। সেখানে তিনি এখন ব্যবসায় জড়িত।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন বলেন, ‘বাইজীদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যখন বিপ্লব গাজী ভাই ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তবে তিনি অনেকদিন ধরে এলাকায় নাই। এখন ঢাকায় রাজনীতি করেন কিনা তা জানি না। ব্যক্তির অন্যায় অপরাধ দল কখনই দায় নেবে না।’
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বাইজীদের বাড়ি পটুয়াখালী হলেও তিনি ঢাকার শান্তিনগরে থাকেন। পদ্মা সেতুতে নাট খোলার বিষয়টি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, বাইজীদ পদ্মা সেতুতে ওই টিকটক ভিডিও বানানোর পর নিজের টিকটক প্রোফাইলে পোস্ট করেন। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরে তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন। একই সঙ্গে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাকটিভেট করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে শান্তিনগরের বাসা থেকে আটক করে সিআইডি।
শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন বাইজীদ।
৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই যুবক সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। যিনি ভিডিও করছিলেন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দেহ।’
নাট হাতে নিয়ে জবাবে বাইজীদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু আমাদের… পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’ এ সময় পাশ থেকে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাইরাল কইরা ফালায়েন না।’