আগামী ২৫ জুন দেশবাসীর আশা প্রত্যাশার পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে । কিন্তু এই সেতু দিয়ে রাজধানীর সাথে যোগাযোগের অন্যতম রুটে নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষকে এর সুফল পেতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।
নড়াইল-গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতু। মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু।
কালনা সেতু উপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক মাস। তবে জুলাইতে একটি লেন যান চলাচলের জন্য উপযোগি হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর তৈরী হবে সেতু বন্ধন, এই সেতুবন্ধনের সরাসরি সুফল পেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে এই অঞ্চলে বসবাসকারীদের। পদ্মার মতই কালনা সেতু এই জনপদের মানুষের আশা প্রত্যাশার সেতু।
ছয় লেনের মধ্যে চারটি মূল লেন হবে দ্রুতগতির ও দুটি লেন কম গতির যানবাহন চলাচলের। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হবেনা, পলি জমবেনা এবং নদীর স্রোত কম বাধা গ্রস্থ হবে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার। সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটি এই এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু। সেতুটি চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একই ভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া, বেনাপোল স্থল বন্দর ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলার দূরত্বও কমবে।
কালনা সেতু প্রসঙ্গে নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, কালনা সেতু নড়াইল গোপালগঞ্জ সীমান্ত মধুমতি নদীর ওপর একটি নান্দনিক সেতু। সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। প্রথম ছয় লেনের সেতুটির উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি আমরা। আশা করছি দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই সেতুটি চালু হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সাথে কালনা সেতুর উদ্বোধন হলে আরও ভাল হতো। তবে আমার জানামতে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, জুলাইতে একটি লেনে চলবে যানবাহন এবং সেপ্টেম্বরে সম্পূর্ণ ভাবে চালু হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা পদ্মা জয় করেছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।’
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, ঢাকার সাথে এশিয়ান হাইওয়ে আমাদের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোল হয়ে কলকাতার সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাথে ঢাকার সাথে সবচেয়ে দ্রুত এবং সল্প সময়ে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমদের এই কালনা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন নেলসন লোসআর্চ টাইপের ব্রীজ। আমাদের এই প্রজেক্টের আওতায় ৬৯০ মিটার ব্রীজসহ প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক, ৮ টি আন্ডার পাচসহ বিভিন্ন অঙ্গ, নদী শাসনের কাজ, অর্ন্তভুক্ত আছে। এই প্রকল্পটি ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮৯%। জুলাইতে যান চলাচলের জন্য উপযোগি হবে এবং সেপ্টেম্বরে সকল কাজ সম্পন্ন হবে। আমাদের এই সেতুটা নির্মাণ হয়ে গেলে এশিয়ান হাইওয়ের আর কোথাও বিছিন্ন থাকবেনা। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ধারাবাহকতা তৈরী হবে। আর এর প্রধান সুফলপাবে নড়াইলসহ এই জনপদের নাগরিকেরা।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। ২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই