আজ ১৬ জুন। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসিরায়) এর ৭৮ তম মহাপ্রয়াণ দিবস। এ উপলক্ষে ঘটা করে কোন সংগঠন কার্যত কর্মসূচি পালন করছেনা।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরবর্তী ছায়া সুনিবিঢ় রাড়ুলী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগষ্ট আচার্য বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী ও মাতা ভূবন মোহিনী দেবী।
তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষাবিদ, শিল্পপতী, রসায়নবিদ, সমাজসেবক, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি কলকাতার মানিক তলায় মাত্র ৮শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় লাখো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন।
স্যার পিসি রায় দেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল ও জন্মভ‚মি রাড়লীতে একমাত্র সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। একাধারে তিনি ২০ বছর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বৃটিশ সরকার তাকে ১৯৩০ সালে নাইট উপাধিতে ভ‚ষিত করেন।
এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহিশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান স‚চক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। বিজ্ঞানী পিসি রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন পরলোক গমন করেন। চিরকুমার এ বিজ্ঞানী জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ মানব কল্যাণে দান করে গেছেন। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠান সরকারিভাবে পালন করা হলেও মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠান স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেই উদযাপন করা হয়।
এ বারের ৭৮তম মহাপ্রয়াণ দিবসে স্থানীয় কিছু সংগঠন সীমিত পরিসরে আয়োজন করেছে নামমাত্র কর্মসূচী।
এর আগে স্যারসরায় স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে পাইকগাছায় নির্মাণাধীন কৃষি কলেজকে বিজ্ঞানী পিসি রায়ের নামে নামকরণ এবং পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিতকরণ, বিজ্ঞানীর বসতবাড়ী সংরক্ষণ এবং পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞানীর জীবনী সম্পর্কিত একটি বিশেষ অধ্যায় অন্তর্ভ‚ক্ত করা, বিজ্ঞানীর মায়ের নামে উপমহাদেশের প্রথম ভ‚বন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয় এবং বিজ্ঞানীর নামের আর, কে, বি, কে হরিশ্চন্দ্র কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশনকে ডিগ্রী কলেজ উন্নতিকরণ ও জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে।
এব্যাপারে কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দিরের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পিসিরায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হরে কৃষ্ণ দাশ জানান, আচার্য বিজ্ঞানী পিসি রায় শুধু পাইকগাছার গর্ব নয়, তিনি বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বের গর্ব। এমন একজন বিজ্ঞানীর জন্মভ‚মিতে ঘটা করে তাঁর মৃত্যু দিবস পালন না হওয়াটা দু:খজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সর্বশেষ উপকূলীয় জনপদের সর্বস্তরের সাধারণের ধারণা, বিজ্ঞানীর জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানীর জীবন আদর্শ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ৭৮তম মহাপ্রয়ান দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও প্রবন্ধ পাঠ অনুষ্ঠান বুধবার বিকেল ৫টায় উমেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে স্যার পি সি রায় স্মৃতি সংসদের সভাপতি ডা. মুহাম্মদ কওসার আলী গাজীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রফিকুল আলম সরদার ও যুগ্ম সম্পাদক মোঃ শরীফুল ইসলামের সঞ্চলনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও বার বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী এ্যাডভোকেট, উমেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর অশোক কুমার ঘোষ, খুলনা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. হেমন্ত সরকার, খুলনা সাহিত্য মজলিসের সভাপতি শাহীনা বাবর।
প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সরকারি পাইওয়ানিয়ার মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ মোকাররম হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্মৃতি সংসদের সহ-সভাপতি গাজী অহিদুজ্জামান খোকন, যুগ্ম সম্পাদক জি এম ইউনুস আলী, বাসুদেব দাশ, এম ডি আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক মোঃ হুমায়ুন কবির, মোঃ রাশেদ রানা, শেখ মনিরুল ইসলাম মনি, এস এম নাজমুল হক, শেখ মাইনুল ইসলাম জুয়েল, মিনতি রায়, এড. শারমিন মারিয়া মুক্তি, সুমি আক্তার, এস এম মাহাদী হাসান, সুমাইয়া চৈতী, মোঃ নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ নির্মাণাধীন পাইকাগাছা কৃষি কলেজকে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জীবনী এবং অবদান বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই নিবেদিতপ্রাণ মণীষীকে জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।