সন্ত্রাসী হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের অবস্থা সংকটাপন্ন। সোমবার বেলা ৩ টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর স্বজনরা তাঁকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
দিঘলিয়া থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে রাতভর অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ জনকে আটক করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার ২১ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, প্রাক্তন দাপুটে সাধারণ সম্পাদক ও বিগত ইউপি নির্বাচনে দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী একমাত্র দলীয় চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করলেও মাঠে ময়দানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন প্রতিক্রিয়ার খবর (যেমন কাউন্টার হামলা, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, রাস্তা ঘাট অবরোধ ইত্যাদি) ‘র কোন খবর পাওয়া যায়নি।
তবে দলীয় চেয়ারম্যানের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আ. লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকদের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় বয়ে দিচ্ছে।
ধারনা করা হচ্ছে চিরতরে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যেই তাঁর উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়। যেমনভাবে হামলা করে করে তার চাচাত ভাই গাজী মোস্তাক হোসেনকে চিরতরে পঙ্গু করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ মে বারাকপুর বাজারে একই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা মোস্তাক গাজীর উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়।
দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আহসান উল্লাহ চৌধুরী খুলনা গেজেট কে বলেন, চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের উপর হামলার মূল সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী শেখ আনছার আলী কে আমরা ৮/১০ দিন পূর্বে একটি নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করি। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) থেকে গতকাল রবিবার (১২ জুন) পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে শেখ আনছার আলী এবং তার অন্য ২ সহযোগী আর্মি সালাম এবং আসলাম বিশ্বাস জামিনে বের হয়ে এলাকায় আসে। পরে রবিবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন হামলার শিকার হন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গাজী জাকির হোসেন এবং শেখ আনছার আলীর মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ প্রথম ধাপের করোনাকালীন সময়ে। ঐদিন বারাকপুর বাজারে শেখ আনছার আলীর সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন গাজী জাকির হোসেন। একই দিন আনছার আলীর নেতৃত্বে হামলা করা হয় গাজী জাকির হোসেনের বাড়িতে। আক্রমণের শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের বড় ভাই বারাকপুর বাজার কমিটির সভাপতি গাজী নাসির উদ্দিন। পিটিয়ে তার হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। এছাড়া বারাকপুর বাজারে হামলার শিকার হন গাজী জাকির হোসেনের সমার্থক ইখলাস শেখ, তৌহিদুল বিশ্বাস, শেখ মাহবুব ও রিগ্যান। এককথায় ঐদিন গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে বারাকপুর বাজারে তাণ্ডব চালিয়ে গাজী জাকির হোসেনের বাড়ি, সমর্থক এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শেখ আনছার আলী এবং তার গ্রুপ নিজেদের শক্তি জানান দেয়।
এ ঘটনার পর থেকে গত দুই বছরে গাজী জাকির হোসেন এবং শেখ আনছার আলী গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে লাখোহাটি গ্রামের ৪ বাড়ির শেখ আনছার আলী লাইম লাইটে আসেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আ. লীগ মনোনীত প্রার্থীর কাছে মাত্র ১ হাজার ভোটে পরাজিত হয়ে আবারো তিনি আলোচনায় উঠে আসেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই