পদ্মা বহুমুখী সেতু। এটা যে শুধু সড়ক সংযোগ করবে তা কিন্তু নয়। এর মাধ্যমে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
এজন্য সেতুর নিচ দিয়ে টানা হচ্ছে গ্যাস লাইন। সেই সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার। তবে বিদ্যুতের লাইন সেতুর নিরাপদ দূর দিয়ে টানা হচ্ছে।
এরই মধ্যে এসব লাইন নির্মাণে কাজ করছেন ৭৫ জন চীনের এবং ৯১০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। তারা স্থায়ীভিত্তিতে কাজ করছেন। ৩০০-৪০০ জন শ্রমিক কাজ করছেন দৈনিকভিত্তিতে।
সেতুর পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন
পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ৪০০ কেভির হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইন। আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধিত) উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ।
প্রকল্পটির আওতায় রিভার-ক্রসিং লাইন নির্মাণের জন্য পদ্মা নদীতে সাতটি টাওয়ারের ফাউন্ডেশন করা হয়েছে। প্রতিটি টাওয়ার ৮৩ মিটার দূরে অবস্থিত। পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার ৪০০ কেভি রিভার ক্রসিং লাইন নির্মাণ হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এর উদ্দেশ্য ঢাকা ও খুলনার মধ্যে ব্যাকবোন ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে ৪০০ কেভি রিভার ক্রসিং লাইন ও আমিনবাজারে ৪০০, ২৩০ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা।
প্রথমে সেতু দিয়ে লাইন টানার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাশ দিয়ে লাইন নেওয়া হচ্ছে। আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা পর্যন্ত ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ হবে।
এদিকে মোংলা ও পায়রা বন্দরে কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টসহ দক্ষিণাঞ্চলে অনেকগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সরবরাহের জন্য সেখান থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত অপর একটি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে পদ্মা নদী পারাপারের জন্য ১১টি টাওয়ার নির্মাণ। যার মধ্যে ৭টি টাওয়ার পদ্মা নদীর মাঝে। এগুলো স্থাপনের কাজ চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়। বাকি চারটি নির্মাণ করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ৮৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১ হাজার ২৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে। এছাড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রয়েছে।
সেতুর নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন
পদ্মা সেতুর নিচতলায় রেললাইনের পাশ দিয়েই বসবে গ্যাস লাইন। এই লাইন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্যাস যাবে মুন্সিগঞ্জে। আর মুন্সিগঞ্জ থেকে সেই গ্যাস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে গোপালগঞ্জে।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের গ্যাসের ব্রাঞ্চ স্টেশন থেকে ৩০ ইঞ্চি ডায়ার পাইপের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে লাইন যুক্ত হবে মাওয়া সাবস্টেশনে। এরপর পদ্মা সেতুর জাজিরা সাবস্টেশন থেকে টেকেরহাট হয়ে গ্যাস লাইন যাবে গোপালগঞ্জে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খুলনায় যাবে গ্যাস।
এরই মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর রেলপথের পূর্ব পাশে শুরু হয়েছে পাইপ বসানোর কাজ। সেতুর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার অংশে ৫৩১টি পাইপ বসানো হবে। পাইপগুলোর দৈর্ঘ্য ১২ মিটার, ব্যাস ৭৬০ মিলিমিটার, ওজন পাঁচ দশমিক ৬৭ টন। পুরোদমে কাজ চলমান।
চলতি বছরের (২০২২ সাল) জুন মাসে পাইপ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ৪০০ কেভি হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সেতুর পাশ দিয়ে পৃথক লাইন টানা হয়েছে। তবে গ্যাস ও অপটিক্যাল ফাইবার যাবে সেতু দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলছি পদ্মা একটি মাল্টিপারপাস ব্রিজ। এই ব্রিজ মানে শুধু সড়কের সঙ্গে সড়কের সংযোগ নয়। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ ঘটাবে পদ্মা সেতু।