কেশবপুরের বাজারগুলিতে ধান চালের মুল্য সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় কেশবপুর খাদ্য গুদামে ধান চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কেশবপুরে ধান চালের দাম কেজি প্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় কৃষক ও মিল মালিকদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য গুদামে ধান, চাল বিক্রি করতে হলে লোকসান গুনতে হবে । যার কারণে কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে মিল মালিকরা দাবি করেছেন, লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করা হলে তারা খাদ্য গুদামে চাল বিক্রি করবেন। এদিকে, দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় গুদাম শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ। এ পরিস্থিতিতে ধান, চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে স্বয়ং খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মৌসুমের ২০ মে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। সে লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রতিজন কৃষক ১ মেট্রিক টন করে ধান দেয়ার শর্তে ২ হাজার ৫৫৩ জন কৃষক লটারীর মাধ্যমে নির্বাচন করে তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে। এ শর্তে গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকরা মাত্র ৬৩.১২০ মেট্রিক টন ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন। সংসারের দায়দেনা মেটাতে কৃষকের মুজদও শূণ্যের কোটায়।
অপরদিকে, খাদ্য গুদামের সাথে এ উপজেলার ৫৫ জন মিল মালিক ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন চাল দেয়ার শর্তে চুক্তিপত্র করে। এ পর্যন্ত মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে মাত্র ৫৫৩.৩৮০ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট কৃষক ও মিল মালিকরা কবে নাগাদ খাদ্য গুদামে ধান ও চাল বিক্রি করবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা। ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সে ক্ষেত্রে সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমন ১ হাজার ৪০ টাকা। অপরদিকে, বাজারে প্রতিমন চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতিমন ১ হাজার ৪৪০ টাকা। এক্ষেত্রে কেজি প্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা কৃষক ও মিল মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। মিল মালিক হাফিজুর রহমান, বিষ্ণুপদ দাস জানান, বোরো ধান ঘরে ওঠার মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সেই ধান দিয়ে যে চাল উৎপাদন হচ্ছে তা খাদ্য গুদামে চলছে না। ইচ্ছা ছিল উত্তরবঙ্গ থেকে চাল আমদানি করে গুদামে সরবরাহ করবেন। কিন্তু বন্যার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ধান সংকটের পরও করোনা ভাইরাসের কারণে চাতাল শ্রমিকরা কাজ করতে অনিহা দেখায়। তারা অভিযোগ করে বলেন, পুঁজিপতিরা মিলে চাল গুদামজাত করে রেখেছেন।
ফলে বাজারে চালের সংকটের কারণে মূল্য বেড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ ব্যাপারে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে কৃষকদের ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি এ বছর খোলা বাজারে ধান চালের মূল্য বেশী। ফলে কৃষক ও মিলাররা সরকারি গুদামে ধান, চাল বিক্রিতে অনিহা দেখাচ্ছে। তারা সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তবে মিল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখা স্বার্থে শেষ সময়ে হলেও তারা গুদামে চাল সরবরাহ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
খুলনা গেজেট/এমআর