রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২ মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে বিবৃতিতে ‘যুদ্ধ’, ‘আগ্রাসন’, ‘সংঘাত’ ইত্যাদি শব্দ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নরওয়ে ও মেক্সিকো প্রতিনিধি যৌথভাবে এই বিবৃতির খসড়া লিখেছে। শুক্রবার সেই খসড়া জমা দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যরাষ্ট্রের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয় সেই বিবৃতি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা মোট ১৫। এই সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ৫টি রাষ্ট্র পরিষদের স্থায়ী সদস্য— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। বাকি ১০টি রাষ্ট্র অস্থায়ী। স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যেকটিই ভেটো বা আপত্তি জানানোর ক্ষমতা রাখে; অর্থাৎ, কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হলে যে কোনো স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র যদি তাতে আপত্তি জানায়, সেক্ষেত্রে সেই প্রস্তাব আর পাস হয় না।
নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, জাতিসংঘ সনদের আওতায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেন এই সংকটের সমাধান করা হয় এবং এই সমাধানের পথে যেসব আন্তর্জাতিক বাধা রয়েছে, সেসব যেন অহিংস পন্থায় দূর করা হয়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক রাশিয়া ও ইউক্রেন সফরকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুই দেশের মধ্যকার সংকট শান্তিপূর্ণ উপায় সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করেছেন এবং তার এই উদ্যোগকে নিরাপত্তা পরিষদ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা পরিষদ আশা করছে, সফরে গিয়ে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন— সে সম্পর্কে তিনি পরিষদের বৈঠকে কিছু বলবেন।’
এদিকে, গুতেরেসও নিরাপত্তা পরিষদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানুষের জীবন রক্ষা ও ভোগান্তি দূর করতে আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই করা হবে।’
গত সপ্তাহে মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতনি ও কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট। তার সেই সাক্ষাতের পরই মূলত ও আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা দানকারী সংস্থা রেডক্রস ও জাতিসংঘের উদ্ধারকর্মীরা ইউক্রেনে প্রবেশের অনুমতি পান। ইতোমধ্যে সংঘাত কবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত বেসামরিক মানুষকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
শুক্রবার ৭১ তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইতোমধ্যে খেরসন, মারিউপোলসহ ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের দখল নিয়েছে রুশ সেনারা।