বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের রাধাবল্লব গ্রামের জুয়েল মির্জা তনু ও তানিয়া সুলতানার একমাত্র সন্তান ইব্রাহীম মির্জা। জন্মের পর থেকেই ইব্রাহীম অসুস্থ। ভালোভাবে হাটতে পারে না। অবশ্য ডাক্তাররা বলেছে উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে উঠবে সে। কিন্তু সামাজিক বন বিভাগের বনায়নের গাছের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার কাজ করা বাবার পক্ষে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা যেখানে দুঃসাধ্য, উন্নত চিকিৎসা সেখানে অসম্ভব। তবুও হতদরিদ্র বাবা ধার-দেনা করে বিভিন্ন সময় বাগেরহাট, খুলনা, ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়েছেন ইব্রাহীমকে। অবস্থার পরিবর্তনও হচ্ছে তার। কিন্তু অর্থাভাবে তিন মাস ধরে ইব্রাহীমকে ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছেন শিশুটির বাবা-মা।
ইব্রাহীমের মা তানিয়া সুলতানা বলেন, আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। হাটতে পারে না, কথা বলতে পারে না। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও আমাদের নেই। ওর বাবা এহেন-ওহেনে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে ঠিকমত খাবার-ই জোটে না। চিকিৎসা করাবো কি দিয়ে। একটু দুধ-ডিম আমার বাচ্চাটারে খাওয়াইতে পারি না। বাচ্চাটা প্রায় খাবারের জন্য কাদে। আগের দিন (শুক্রবার) দুধ আনতে যাই। কিন্তু টাকা না থাকায় দুধ আনতে পারিনি। খালি হাতে আসলে ছেলেটা আমার মুখের দিকে এমন ভাবে তাকায়ে ছিল- আমি কান্না আটকাতে পারিনি। এই বলে আবারও কাঁদতে থাকেন এই মা।
প্রতিবেশি রঞ্জিতা পাল বলেন, পরিবারটি সত্যিই খুব অসহায়। তনুর (জুয়েল মির্জা) ছেলে জন্মের থেকে অসুস্থ। ওর বাবাও অসুস্থ দীর্ঘদিন। যে আয় করে তা দিয়ে সংসার-ই ঠিকমত চলে না। চিকিতসা করাবে কিভাবে। আমরা এলাকাবাসী মাঝে মাঝে একটু খাবার, সামান্য টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্যে করি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল। এই অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের পরিবারটির প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
ইব্রাহীমের দাদী শ্যামলী বেগম বলেন, রমজানের আগে হোটেলে একটু কাজ করতাম। এখন সে কাজও নেই। ৫ সদস্যের ভরণ-পোষন ছেলের করতে হয়। তারপরে আবার দুইজনের চিকিৎসার ব্যয়। আমি নিজেও অসুস্থ। আমরা খুব অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছি।
সামাজিক বন বিভাগের ওয়াপদার গাছের পরিচর্যা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইব্রাহীমের বাবা জুয়েল মির্জা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, চার মাস ধরে বেতন পাইনা। ঘরে চাল নেই। বাড়ি গেলেই বাচ্চাটা কান্নাকাটি করে। ওর জন্য একটু খাবার কেনার টাকাও আমার কাছে নেই। চিকিৎসা করাবো কিভাবে। এই যে ঈদ চলে আসল বাচ্চা ছেলেটার জন্য একটা ড্রেস কিনতে পারলাম না। বৃদ্ধ বাবা-মাকেও কিছু কিনে দিতে পারিনি। আমি এক হতভাগা সন্তান, হতভাগা বাবা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী অসুস্থ ইব্রাহীমকে সাহায্যের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেছি। তবে শিশুটির সুস্থ হতে যে অর্থের প্রয়োজন তা যোগাড়ের সামর্থ্য পরিবারটির নেই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে হয়ত শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনার মাধ্যমে শিশুটির অসুস্থতার কথা শুনলাম। আমরা দ্রুত-ই তার খোজখবর নিব। এছাড়া চিকিৎসমকদের সাথে কথা বলে ইব্রাহীমকে যথা সম্ভব সহযোগীতার আশ্বাস দেন তিনি।