আমেনা খাতুন (আসল নাম নয়), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে হল থেকে বের হন। খুলনা নিউ মার্কেটের উদ্দেশে একটি অটোরিক্সায় ওঠেন। কিন্তু কিছুদুর যাওয়া মাত্র যাত্রীবেশে দুর্বৃত্তরা ইজিবাইকের মধ্যে তার শ্লীলতাহানি করে। বাঁধা দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হওয়ায় বুদ্ধির জোরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান। এ নিয়ে তিনি ২৩ এপ্রিল ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছেন। এ ব্যাপারে কেউ তাকে লিখিতভাবে কিছু জানাননি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে খুবির ঐ শিক্ষার্থী জানান, তার বাড়ি বরগুনা। সেদিন খুব ভোরে হল থেকে বের হয়ে অটোরিক্সার জন্য অপেক্ষা করেন। নিউ মার্কেটে সরাসরি যাওয়ার জন্য অটোরিক্সার খোঁজ করেন তিনি। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর পেয়েও যান। সকাল ৭ টা ১০ মিনিটের দিকে ওই অটোরিক্সায় ওঠেন। সেখানে আগে থেকে কয়েকজন যাত্রীবেশে দুর্বৃত্ত ছিল । ঝাকি কম লাগবে বলে তিনি পেছনে গিয়ে বসেন। পিছনের সিটে বসা যাত্রী তাকে পাশে বসতে বললেন। গল্লামারি ফুটকোর্টগুলো পার হওয়ার পর তার শ্লীতাহানী করে।
তিনি বলেন, “ঈদের সময় সবার স্বপ্ন বাড়ি যায়। আমার ও স্বপ্ন বাড়ি যাচ্ছিল, কিন্তু পথে বাধা দিল এক মাঝ বয়সি ভদ্রলোক (আসলে না)। আমরা যারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমরা জানি হল রেডের সামনে দিয়ে অটোরিক্সা যায়। আমার সকাল ৮ টা ১০ মিনিটের সময় খুলনা টু বরগুনা বাস ছিল। সকাল ৭ টা ১০ মিনিটের দিকে হল থেকে বের হয়ে এ অটোরিক্সায় উঠি নিউমার্কেট এর জন্য। সাধারণত শিববাড়ি গিয়ে এরপর নিউমার্কেট যাই। এবার ব্যাগ ছিল তাই সরাসরি যেতে চাইছি। রিক্সা খুঁজছিলাম কিন্তু পাইনি,বাধ্য হয়ে অটোরিক্সায় উঠছি। আমার অটোর চালকের সামনে একজন বসা ছিল, আর ভিতরে পিছনের সিটে একজন বসা ছিল। ঝাকি কম লাগবে তাই পিছনে বসছি। আমার পাশে যিনি বসছে তিনি গেটের পাশে বসে আমাকে মধ্যে বসতে বললে আমি সেখানে বসি। ঝামেলাটা হলো গল্লামারি ফুডকোর্ট গুলো পেরোনোর পর। পাশের মাঝ বয়সি ভদ্রলোক আমার কাঁধে হাত দিল.. প্রথমে ভাবছিলাম ভুলে। পরে সে আবার কাজ টা করলো… এইবার তাকে নিষেধ করলাম… একটু পাশে সরে বসলাম….১/২ মিনিট পর হঠাৎ সে আমার কোমরে হাত দিল… এইবার চিৎকার দিয়ে আমি চালককে থামাতে বললাম… কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার আমি যতো চিৎকার করছি সে ততো জোরে চালায়। এরপর পাশের লোকটা আমার মুখ চেপে ধরলো। রোজার সময় বলে রাস্তায় লোকজন কম, কিন্তু পাশ দিয়ে ৪/৫ টা অটো গেলো কিন্তু কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকাইলো না। পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল আমার। মনে হচ্ছিল হয়তো আর আম্মু, বাবা কে দেখতে পারবো না… এই হয়তো শেষ আমার। অনেক চেষ্টা করলাম নিজেকে বাঁচানোর…। হঠাৎ আল্লাহর রহমতে কাজে দিল অনেক আগে শেখা কারাতে আর আমার হিজাবের পিন। হাতে কামড় দিয়ে পা দিয়ে লাথি দিলাম সজোরে। লোকটা পরে গেল চলন্ত অটো দিয়ে। লোকটা পরে যাওয়ায় কিছু লোকজন ব্যাপারটা খেয়াল করায় চালক থামাতে বাধ্য হলো …। এবারের মতো আমি বেঁচে গেলাম। লোকটার হয়তো সিরিয়াস ইনজুরি হইছে, কিন্তু আমি দেখতে পারি ভয়ে কান্না করবো না কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এই প্রথম খুলনা শহরকে অপরিচিত মনে হচ্ছিল। যেখানে আমাকে সাহায্য করার কেউ নেই। কয়েকজন লোক মিলে আমাকে একটা রিক্সায় তুলে দিল… । আমি নিউ মার্কেট এসে বাস পাই। হাত পা কাঁপতেছিল। কাকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এতো ভয়ংকর পরিস্থিতি আমার জীবন এ আর হয়নি। আগে শুনছি, আজকে প্রমাণ পেলাম। বাংলাদেশ এর রাস্তায় মেয়েরা কতো অসহায়।”
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছে। কয়েকটি স্থানের ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু কোথাও এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যে লোকটিকে অটোরিক্সা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে সেও হয়ত বা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়েছে এমন সংবাদ জানাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলেও সেখানে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। থানায় এব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।