খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

ক্ষেতের পোকা দমনে আলোক ফাঁদের ব্যবহার বেড়েছে

আজিজুর রহমান

খুলনার দাকোপ উপজেলার ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোকফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা হচ্ছে। আমনের ক্ষেত সুরক্ষায় আলোকফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে। ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তা দমন করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষকেরা ইতিমধ্যে উপজেলার ২৮টি ব্লকে আলোকফাঁদ স্থাপন করেছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দাকোপে এ বছর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে সচেতনতার অভাবে অনেক কৃষক জমিতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে ফসলের জমির উপকারি অনেক পোকা মারা যায়। পরিবেশদূষণসহ ধান উৎপাদনে কৃষকেরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আলোকফাঁদ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয়ের পর কীটনাশক প্রয়োগ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকের অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার কমছে, আর ফসল থাকছে অনেকটা বিষমুক্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২৮টি ব্লকে প্রায় ২১০টি আলোকফাঁদ স্থাপন শুরু করেছে। এর বাইরেও কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকরা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫টি আলোকফাঁদ স্থাপন করেছেন। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে আলোক ফাঁদের সংখ্যা প্রায় ৩০০ হবে। গত বছর ২৮টি ব্লকে ২২৫টি আলোকফাঁদ স্থাপন করা হয়েছিল।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান খুলনা গেজেটকে বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে টাকা খরচ করে ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এর পরিবর্তে বিনা খরচে আলোকফাঁদ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে বেশ ব্যবহার বেড়েছে। এতে পরিবেশদূষণও হচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার চালনা ব্লকে ‘আলোকফাঁদ’ স্থাপন করা হয়। ধান পাকার আগ পর্যন্ত ক্ষেতে ওই আলোকফাঁদ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ওই ব্লকের একটি আমনের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ধানের জমির পাশে তিনটি খুঁটি দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক বাতি ঝোলানো হয়েছে। বাতির নিচে একটি পানির পাত্র রাখা হয়েছে, পাত্রে ডিটারজেন্টমিশ্রিত পানি। বাতি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ফসলের জমির বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা এসে নিচে রাখা পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। এভাবেই আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। বৈদ্যুতিক বাতি, চার্জার ও সৌরবাতি দিয়ে এই কাজ করা হয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, বীজতলা থেকে ধানগাছ সংগ্রহ করে ক্ষেতে রোপণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গাছে সবুজ রঙ ধারণ করেছে। কিছুদিন বাদে গাছে থোড় আসা শুরু করবে। এই সময়ে ধানে সবুজ ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করে। পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে গত ২৫ আগস্ট আমন ক্ষেতে আলোকফাঁদ ব্যবহার শুরু করা হয়, আর চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

উপজেলার চালনা গ্রামের কৃষক জীবন মন্ডল এ বছর আটবিঘা আমনের ক্ষেতে আলোকফাঁদ ব্যবহার শুরু করেছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, আলোকফাঁদ পেতে ক্ষেতে সবুজ ঘাসফড়িং ও মাজরা পোকা লক্ষ করা গেছে। ফসলে কী ধরণের পোকার উপস্থিতি বা আক্রমণ ঘটছে, তা জানতে এই প্রযুক্তি খুবই কার্যকর। তিনি আরও বলেন, আলোকফাঁদ এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয় উঠছে। এর ব্যবহার আরও বাড়লে কৃষক উপকৃত হবে।

তিলডাঙা গ্রামের কৃষক মিঠু গাইন বলেন, ‘আগে টাকা খরচ করে কীটনাশক কিনে ধানের পোকা মেরেছি। কিন্তু এখন আর টাকা খরচ করা লাগে না। আলো জ্বললে পোকা মরে।’ এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

পানখালী ব্লকের চাষি সাগর হালদার জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আলোকফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তাঁর ক্ষেতে বাদামি ঘাসফড়িং ও পাতা মোড়ানো পোকার উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষেতে কোন ধরণের পোকা আছে, তা শনাক্ত করার একটি কার্যকর প্রযুক্তি বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান খুলনা গেজেটকে জানান, আলোকফাঁদ প্রযুক্তি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। যা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি। অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে কৃষক সহজেই ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁর জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় আছে কি না, তা জানতে পারবে। পোকার উপস্থিতি ঘটলে বা কী ধরণের পোকা আছে? তা শনাক্ত করে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এতে ফসলে কোনো প্রকার প্রভাব পড়বে না। ফসল উৎপাদন খরচ কমে যাবে ও ফসল হবে অনেকটা বিষমুক্ত।

 

খুলনা গেজেট / এআর / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!