সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহিতা ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক : বর্ধিত সহযোগিতা ও অগ্রসর অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আইন প্রয়োগ বিষয়ে আমি সৎভাবে বলতে চাই, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহিতা ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এমন একটি র্যাব চাই, যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে তেমনি কঠোর থাকবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখবে।
পিটার হাস বলেন, র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা জোরদার আইন প্রয়োগ বিষয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব।
সন্ত্রাসবাদ দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন পুলিশ, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ইউনিট এবং চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান হাস।
নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বাড়াতে চায় ওয়াশিংটন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি বিশেষায়িত প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি— জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) ও আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) সম্পন্ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমরা সম্পৃক্ত। আমরা বেশ কয়েকটি বার্ষিক অনুশীলন পরিচালনা করি। দুদেশের নিজ নিজ বিশেষ অপারেশন বাহিনী বর্তমানে টাইগার শার্ক নামে একটি যৌথ মহড়া পরিচালনা করছে। আমরা অন্যান্য সমমনা পরস্পর-সহযোগী দেশগুলোর সমন্বয়ে এসব সহযোগিতা কার্যক্রম জোরদার করতে পারি।
পিটার হাস বলেন, আমরা দুটি মৌলিক তথা ভিত্তিমূলক চুক্তিতেও যেতে পারি। যার একটি জিসোমিয়া, এর আওতায় সামরিক ক্রয় সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের মূলনীতি নির্ধারিত হবে। এ রূপরেখা বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী অভীষ্ট ২০৩০ অর্জনে অবদান রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আরেকটি চুক্তি আকসা। এর আওতায় আমাদের সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় একে অপরকে সহায়তা দিতে পারবে এবং বিমান, যানবাহন বা নৌ-যান যেকোনো সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা খুচরা যন্ত্রাংশ ধার দিতে পারবে; কিংবা শুধু জ্বালানি ও খাদ্য বিনিময়ে সক্ষম হবে।
জিসোমিয়া ও আকসা সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে উল্লেখ করে পিটার বলেন, এগুলো কারিগরি চুক্তি। এগুলো জোট বা সামরিক চুক্তির আওতাভুক্ত নয়, কিংবা এগুলো কোন বিস্তৃত ও অস্পষ্ট প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও নয়। এগুলো কেবল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির উপাদান হিসেবে সহায়তা করবে।
৭০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে সই করেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত চুক্তিপত্র সইয়ের মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম বেগবান হবে এবং নতুন সরঞ্জাম অনুদান প্রদান ত্বরান্বিত হবে।
৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সংলাপে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি উভয়পক্ষ জিসোমিয়া ও আকসা চুক্তি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেছে।
সংলাপে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্বে দিয়েছিল পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বনি জেনকিন্স।