করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। দেশে করোনার সংক্রমণের তীব্রতা কমে জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরতে থাকায় আবার বটতলায় ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর নববর্ষের এই দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রমনা বটমূলে প্রবেশ করছে সাধারণ মানুষ। এ সময় কারও হাতে বাঘের মুখোশ, কারও হাতে হাতপাখা, কেউবা নিয়েছেন একতারা-দোতারা। রমনার বটমূলের মূল মঞ্চ থেকে পহেলা বৈশাখে গান-পাঠ-আবৃত্তিতে স্বাগত জানানো হবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৯–কে।
বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) ভোর ৬ টায় রমনা পার্কে প্রবেশ পথ, রমনা রেস্তোরাঁ গেইট ও শিশু পার্কের বিপরীতে অস্তাচল গেইটে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
ভোরে রমনা পার্কে প্রবেশ পথে গিয়ে দেখা যায়, নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে মানুষ। এ সময় মোহাম্মদপুর থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আসা আব্বাস ফারুক বলেন, দুই বছর পর নববর্ষের ভোরে রমনা রমনা বটমূলে এসেছি। বাঙালি সংস্কৃতির নববর্ষের এই আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে ভালো লাগছে।
রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা কানিজ আশা বলেন, পরিবারের লোকজনকে নিয়ে আসছি। ভোরের আকাশে নতুন সূর্যোদয়ে নববর্ষকে রমনার এই বটমূলে স্বাগত জানাবো। ভালো লাগছে দুই বছর পর আসতে পেরে।
এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে যন্ত্রবাদন দিয়ে। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে থাকবে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগ মঙ্গললোকে’। গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের সংগীতানুষ্ঠান হয়ে আসছে। ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে শিল্পীরা।
প্রতিবছর প্রায় দেড়শ শিল্পী অংশ নিলেও এবার ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে মাসব্যাপী নিয়মিত মহড়ায় গান, আবৃত্তি পাঠে অংশ নেয় ৮৫ জন শিল্পী। পঞ্চকবির গান ছাড়াও থাকবে লোকগান, ব্রতচারীদের একটি গান ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’। লোকগানের মধ্যে থাকবে ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’।
১৯৬৭ সালে শুরু হওয়া এই বর্ষবরণ আয়োজন কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি।