পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঘূর্ণি হাওয়া। কখন কোনদিকে মোড় নিচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট করা নিয়ে অধিবেশন শুরু হলেও কমপক্ষে তিনবার মুলতবি করা হয়েছে তা। ইফতারের পরে আবার অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনেই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু এ ভোট নিয়ে এক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্পিকার আসাদ কাইসার বলেছেন, ইমরান খানের সঙ্গে তার ৩০ বছরের সম্পর্ক। তার বিরুদ্ধে তিনি অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট অনুমোদন দিতে পারেন না।
ওদিকে শুক্রবার তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, তিনি মনে করেন অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হতে পারে আগামী সপ্তাহে। অন্তত আলামত তেমনই দেখা যাচ্ছিল। পাকিস্তানি মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছিল- সরকার দলের মন্ত্রী এবং সদস্যদেরকে তাদের বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে শীর্ষ মহল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে এদিন অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হতে না পারে। আবার ক্ষমতাসীন পিটিআইয়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতা সুপ্রিম কোর্টের পার্লামেন্ট পুনর্বহালের নির্দেশ বাতিল করতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। পরিস্থিতি দেখে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি যে, গত রাতেই অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট হবে। এতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পার্লামেন্টে বলেছেন, গতকালের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট না দিলে বিরোধী দলীয় এমপিরা পার্লামেন্ট ত্যাগ করবেন না। আবার এদিন অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আহ্বান করেন রাতের অনেক গভীরে। যদি অনাস্থা প্রস্তাব ভোটেই দেয়া হয়, তাহলে তার হেরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় শতভাগ। এতে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যদি তাই হয়, তাহলে তার মন্ত্রিপরিষদ তো টিকেই থাকবে না। এ অবস্থায় তিনি রাতের গভীরে কি করে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক আহ্বান করেন! তাহলে এদিন অনাস্থা প্রস্তাবে কি ভোট হচ্ছে না? এমন জিজ্ঞাসা অসংখ্য মানুষের। মন্ত্রিপরিষদের এই বৈঠক আহ্বানকে অনেকে বিস্ময় হিসেবে দেখছেন। তবে কি ইমরান খান রাজনীতিতে তার ক্রিকেটীয় জীবনের ‘গুগলি’ বল করছেন- যা ব্যাটার বা অন্য কেউ টেরই পাচ্ছেন না কীভাবে আসছে আর কিভাবে তা উইকেটে আঘাত হানতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শনিবার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পার্লামেন্ট সেক্রেটারিয়েটের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জিও টিভি জানিয়েছে, পার্লামেন্টের অধিবেশন আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সরকারের এতক্ষণ যেসব পরিকল্পনার কথা বলা হলো, দৃশ্যত সেটাই বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এমন হলে বিরোধী দল কি পদক্ষেপ নেবে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির রায়কে বাতিল করে দেন। কাসিম সুরি তার রায়ে বলেছিলেন, অনাস্থা প্রস্তাব অসাংবিধানিক। তাই এটা খারিজ করে দেন তিনি। তার ওই রায়ের পর পরই প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট করার নির্দেশ দেয়। এর ফলে বিরোধী শিবিরে উল্লাস দেখা দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিপরীতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, এই প্রস্তাবে ভোট শনিবারের পরিবর্তে আগামী সপ্তাহে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তার ভাষায়, আমরা অনেক সময় নেব না। অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটের আগে হুমকিমূলক চিঠির বিষয়ে পার্লামেন্টকে ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্র সচিব। তার এ বক্তব্যে অনাস্থা ভোট নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দৃশ্যত, সরকার সময়ক্ষেপণ করার চেষ্টা করছে বলেই মনে হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট করার আদালতের নির্দেশও এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারকে আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
ওদিকে পার্লামেন্ট পুনর্বহালে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন পিটিআইয়ের নেতা আসাদ উমর, বাবর আওয়ান, আজহার সিদ্দিকী। পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন পিটিআই নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে তারা এই রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়েছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৯-এর অধীনে জাতীয় পরিষদের জন্য কোনো বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে না সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে তা খারিজ করে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। নতুন নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু ৭ই এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ডেপুটি স্পিকারের আদেশকে উড়িয়ে দিয়ে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে। ৮ই এপ্রিল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয় স্পিকারকে। শনিবার এ নিয়ে অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ৭ই এপ্রিলের রায় বাতিল দাবি করে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পার্লামেন্ট বিষয়ক উপদেষ্টা ও পিটিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ উমর, আইনজীবী মুহাম্মদ আজহার সিদ্দিকী প্রমুখ।
এ অবস্থায় শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরে তা মুলতবি করেন স্পিকার। পরে দুপুর দেড়টায় অধিবেশন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় আড়াইটায়। এ সময় সরকারি দলের এবং বিরোধী দলের নেতারা বক্তব্য শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইফতারের জন্য বিরতি দেয়া হয়। পরে আবার শুরুর কথা রয়েছে অধিবেশন। এরই মধ্যে পার্লামেন্টে ইমরান খানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাশিয়া সফর এড়িয়ে যেতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। যখন জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিকে (এনএসসি) ‘টপ সিক্রেট ডকুমেন্ট’ সম্পর্কে জানানো হয়, তখন ফোরাম অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্তের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করা হয়। পিএমএলএনের নেতা খাজা সাদ রাফিকি এ সময় তার কথার মধ্যে কথা বলেন। কিন্তু কুরেশি বলে যেতে থাকেন- ৩রা এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কখনোই অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। তিনি শুধু উদ্ভূত অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কথা বলেছেন। এ বিষয়ে পরামর্শের পরে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
কুরেশি আরও বলেন, মিডিয়া এবং পাকিস্তানের জনগণ অর্থের বিনিময়ে এমপি কেনা (হর্স ট্রেডিং) সম্পর্কে অবহিত। অনুগত পার্লামেন্ট সদস্যদের কিনে নেয়ার অসাংবিধানিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যারা এখন সংবিধান ও বিচার বিভাগের কথা বলছেন, তারা এসব অসাংবিধানিক রীতি চর্চার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সিনেট নির্বাচনের পর থেকেই পিটিআই বার বার এসব অন্যায় চর্চার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। এমনকি এ বিষয়ে আদালতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে পিটিআই। কিন্তু এক বছর ধরে এ বিষয়ে কোনো রায় দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, যারা এসব নাটক রচনা করছেন তাদেরকে চিনে রাখবে ইতিহাস। যেমন সাবেক সরকারের দুর্নীতির বিষয় হাইলাইট করা হয়েছে। কুরেশি আরও বলেন, আমরা এই সরকার ছেড়ে যাওয়ার আগে আমি বলতে সবার নজরে এ বিষয়টি আনতে চাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করেছিলেন। তাতে রাশিয়া সফর বাতিল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। বিশ্বের কোথায় একটি সার্বভৌম দেশ অন্য দেশ থেকে নির্দেশনা পায়, কোন স্বাধীন দেশ সেই নির্দেশনা গ্রহণ করে?
অন্যদিকে পিপিপি’র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি স্পিকারকে স্মরণ করিয়ে দেন। বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবে অবশ্যই ভোট হতে হবে। এদিন আদালতের আদেশের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি স্পিকারকে বলেন, আপনি শুধু আদালতকে অবমাননাই করছেন এমন নয়। একই সঙ্গে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। কারণ, আপনি সুপ্রিম কোর্টের আদেশে অন্য কোনো এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হতে দিতে পারেন না। পিটিআইয়ের মন্ত্রীরা, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, ডেপুটি স্পিকার- এরা সবাই ৩রা এপ্রিল সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই অপরাধে এরা সবাই জড়িত।
এ সময় বিলাওয়াল ভুট্টোকে থামিয়ে দিয়ে স্পিকার বলেন, তিনি আদালতকে শ্রদ্ধা করেন। তবে পার্লামেন্টের কার্যবিধিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। আবার আদালতের কাজে পার্লামেন্টও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। পিপিপি’র চেয়ারম্যান আদালতের আদেশ পালন করার জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান। স্পিকারকে সতর্ক করে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি আরও বলেন, শনিবারের এজেন্ডা যদি আপনি অনুসরণ না করেন, তাহলে বিরোধীরা পার্লামেন্ট ত্যাগ করবে না। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। সরকারকে উৎখাতের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের সমর্থন আছে বিরোধীদের। এদিন পার্লামেন্টের অধিবেশনে যোগ দেননি ইমরান খান। এর সমালোচনা করে পিপিপির এই নেতা বলেন, পার্লামেন্ট থেকে কাপুরুষের মতো দূরে সরে আছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে জালিয়াতি সম্পর্কে বিলাওয়াল বলেন, পিটিআইয়ের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল এমপিদের। তারা সিনেট নির্বাচনে মাত্র চার ভোটে বিজয়ী হয়েছে। বিলাওয়াল বলেন, তার ২০ জন এমপিকে জোরপূর্বক গুম করে দেয়া হয়েছিল। এখন পিটিআইয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। কারণ, কাউকে গুম করে দেয়ার সুযোগ নেই তাদের হাতে। ইমরান খানের ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব নিয়ে বিলাওয়াল বলেন, তিনিই তো ক্ষমতায় এসেছেন একটি বিদেশি ষড়যন্ত্রের ধারণার ওপর ভিত্তি করেন। তাকে আদালত অযোগ্য ঘোষণা করতে পারতো। তার বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান ধর্মঘট করতে পারতাম।
বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ বলেন, ইমরান খান একজন ‘সিলেক্টিভ’ প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ তাকে একটি পক্ষ (সেনাবাহিনীর দিকে ইঙ্গিত) সিলেকশন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। তিনি বক্তব্য দিতে শুরু করলেই পার্লামেন্টে উপস্থিত পিটিআইয়ের ১৫১ জন এমপি স্লোগান দিয়ে তার বক্তব্যে বিঘ্ন ঘটান। তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পার্লামেন্ট চালানোর জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ সময় স্পিকার বলেন, পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ ইস্যুতে পার্লামেন্টে আগে আলোচনা হওয়া উচিত। অব্যাহত ভাষণে শাহবাজ বলেন, ৭ই এপ্রিল হলো পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দিন।
ওদিকে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান খান। এ সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন- আমি ‘আমদানি’ করা সরকার মানব না। এর বিচারের জন্য জনগণের কাছে ফিরে যাবো। তিনি বলেছেন, জাতীয় পরিষদ পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে আমি বিচার বিভাগকে সম্মান করি। তাদের দেয়া রায় আমি মেনে নিয়েছি। উল্লেখ্য, ইমরান খানকে এক সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময়কে স্মরণ করে তিনি বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন দেশে ন্যায়বিচারের অভিভাবক হলো বিচার বিভাগ। তিনি আরও বলেন, দেশের বিচার বিভাগকে তিনি যখন শ্রদ্ধা করেন, তখন সুপ্রিম কোর্টের কমপক্ষে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয় তদন্ত করা উচিত ছিল।
পক্ষান্তরে সুপ্রিম কোর্ট ‘হুমকিমূলক চিঠি’র বিষয়কে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় তিনি হর্স ট্রেডিং বা তার দলের নেতাদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়ার বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩ (এ)-এর সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেন। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের যুব সমাজ হলো আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যদি দেখে নেতারা তাদের বিবেক বিক্রি করে দিচ্ছেন, তাহলে তাদের সামনে আমরা কি শিক্ষা রেখে যাচ্ছি? এমনকি সংরক্ষিত আসনে যেসব ব্যক্তিকে এমপি বানানো হয়েছিল, তারাও অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই দাঁড়াবে জাতি- বলে মন্তব্য করেন ইমরান খান। বলেন, যদি জাতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং দেশে অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর উন্নত না করে তাহলে কেউই তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না।
হুমকিমূলক চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, এই চিঠি মিডিয়া বা পাবলিকের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। কারণ এটা কোড সংবলিত। এই কোড প্রকাশ হলে পাকিস্তানের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে অনাস্থা প্রস্তাবে বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে। আমি চাই সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে। কারণ, এটা অত্যন্ত গুরুতর এক অভিযোগ। বিদেশি একটি দেশ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার দেশের সরকারকে উৎখাত করতে চায়। এ জন্য সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত করবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন কর্মকর্তার মধ্যে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে যে ইমরান খানের রাশিয়া সফর করা উচিত হয়নি। অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগেই ইমরান খান অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করেন। বলেন, যদি ইমরান খান এই অনাস্থা প্রস্তাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন, তাহলে পাকিস্তানের সামনে ভয়াবহ পরিণতি আসবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা আগেই জানতেন যে, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয়া হবে না। তারা আরও জানে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে পাকিস্তানে কে ক্ষমতায় আসবে।
ভাষণে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ আনেন ইমরান। শাহবাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তিনি তো দৃশ্যত শপথ গ্রহণের জন্য তার শেরওয়ানি পর্যন্ত প্রস্তুত রেখেছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।