প্রেমিক রাজু দাশকে বিয়ে করে সুখী হতে চেয়েছিল স্কুল ছাত্রী প্রেমিকা প্রিয়া দাস (১৬)। এজন্য বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রেমিককে সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিল সে। তবে এক সময় তাকে ছেড়ে সটকে পড়ে প্রতারক প্রেমিক রাজু। অবশ্য হাল ছাড়েনি প্রিয়া। বিয়ের দাবিতে একাধিকবার প্রেমিক রাজুর তালার জালালপুরের আটঘরাস্থ বাড়িতে উঠে ধর্নাও শুরু করে। তবে প্রিয়ার আগমনের খবরে বরাবর আগেই বাড়ি থেকে সটকে পড়ে সুচতুর রাজু। প্রেমিক পরিবারের মিষ্টি প্রতিশ্রুতিতে সেবারও বাড়ি ফিরেছিল প্রিয়া। তবে কথা না রাখায় সর্বশেষ ৩১ মার্চ নিজ পরিবারের একাধিক সদস্যকে সাথে নিয়ে রাজুর বাড়িতে ধর্না শুরু করে প্রিয়া।
সন্ধ্যায় স্থানীয় পর্যায়ে এক ঘরোয়া শালিসীতে বংশ মর্যাদার ভয়, রাজুর বাড়ি না ফেরা ও নানা পরোক্ষ হুমকিতে শেষ পর্যন্ত তার সাথে বিয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয় তার। পক্ষের অনেকেও দূরে সরে যায় সেদিন। রাতে স্বজনদের সাথে বাড়ি ফেরে প্রিয়া। তবে আর নিজেকে সামাল দিতে পারেনি। বুক ভরা অভিমান, রাগে, দু:খে ক্ষোভে ও লোক লজ্জায় ঐ রাতেই নিজ ঘরের আঁড়ায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে পড়ে সে। সাঙ্গ হয় তার ভবলীলা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তে পাঠায়। ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়। মাতৃহারা প্রিয়া পাইকগাছা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার বাবুল দাস’র মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণকাটি গ্রামের সুবির দাশের ছেলে রাজু দাশ’র সাথে প্রিয়ার দীর্ঘ দিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সর্বশেষ তাদের সম্পর্কটি গভীর পর্যায়ে পৌছালে সটকে পড়ে রাজু দাশ। প্রিয়া তাকে বিয়ের দাবিতে একাধিকবার কৃষ্ণকাটিস্থ বাড়িতে ধর্নায় বসলেও ঘর বাঁধা হয়নি। সর্বশেষ নিজেকে আত্নাহুতিতে মুক্তি দেয় রাজুকে।
এদিকে তার আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষে থানায় কোন প্ররোচনা মামলা হয়নি। ঘটনা তদন্তে কোন প্রকার আগ্রহ দেখায়নি পুলিশ। পুলিশের দাবি, মামলা হয়নি। এখন ময়না তদন্তের জন্য অপেক্ষা। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট যাই-ই আসুক আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়েছিল সে। ঘটনার পর থেকে রাজুর বাড়িতেও তালা ঝুলতে দেখা যায় কয়েক দিন। স্পর্শকাতর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে সেদিন কারা ছিলেন শালিসী বৈঠকে? অনেকের প্রশ্ন, কি এমন ঘটনা ঘটেছিল জেঠুয়ার শালীসে? যাতে হার না মানা প্রিয়া রাতেই বাধ্য হয় আত্নহুতি দিতে? এমন নানা প্রশ্নের মাঝে দাবি উঠেছে ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে অন্তরালের অজানা অনেক তথ্য। যাতে আর যাই হোক হয়তো প্রিয়ার মত অবেলায় আত্নাহুতি দিতে হবেনা কাউকে।
ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখি হলেও দৃষ্টিগোচর হয়নি পুলিশের। ঘটনার পর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে অনেক দৌড়-ঝাঁপও হয়। সূত্র জানায়, প্রিয়ার পরিবারকে ম্যানেজ করতেও লবিং শুরু হয়। তবে গতি হয়নি এখনো। রাজু পরিবারের পক্ষের প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলছেননা প্রতিবেশীরাও।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি লোক-মুখে শুনেছেন বলে স্বীকার করে স্থানীয় জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বিষয়টি দু:খজনক বলে অভিহিত করেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ইন্দ্রজীৎ দাশ বাপী ৩১ মার্চ শালিসীর ব্যাপারে বলেন, ঐদিন উভয় পরিবার তার কাছে গেলে তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দেন।
এব্যাপারে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, প্রেমঘটিত কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। লাশ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএ