খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

টিপ পরায় ইভটিজিং করা সেই কনস্টেবল শনাক্ত

গে‌জেট ডেস্ক

কপালে টিপ পরায় রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে ‘ইভটিজিং’ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে শনাক্ত করা হয়েছে। নাজমুল তারেক নামেও ওই কনস্টেবল বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ওই কনস্টেবলকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করেছি আমরা। যথাযথ তদন্ত হওয়ার পর দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে, লতা সমাদ্দার তার অভিযোগে বলেন, শনিবার সকালে তিনি তার কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে (আনুমানিক সকাল ৮টা ২০ থেকে ৮টা ৩৫) তেজগাঁও কলেজের দিকে এগোতে থাকেন। তখন সেজান পয়েন্টের সামনে একজন পুলিশ (পোশাক পরিহিত, মোটরসাইকেল নং: ১৩৩৯৭০) স্টার্ট বন্ধ রাখা মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিলেন। তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্য শিক্ষিকার কপালের টিপ নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

ওই সময় ওই শিক্ষিকা পেছন ফিরে গিয়ে তার আচরণের প্রতিবাদ করলে পুনরায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তিনি শিক্ষিকার গায়ের ওপর চালিয়ে দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করেন। শিক্ষিকা সরে গিয়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বাইকের নিচে পড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

শনিবার ওই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। রোববার (৩ এপ্রিল) সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ দাবি জানান তিনি।

সুবর্ণা বলেন, ‘আমি একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, যেটা আমি মনে করি দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ও বাংলাদেশের নারীসমাজের জন্য অত্যন্ত ঘৃণীত একটি ঘটনা ইভটিজিং। ঘটনাটা আমরা শুনে এসেছি, বখাটে ছেলেপেলে স্কুলের বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের ইভটিজিং করে। সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত, মাননীয় স্পিকার। কিন্তু আমি যখন দেশের আইন রক্ষাকারী কাউকে ইভটিজিংয়ের ভূমিকায় দেখি, তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জার একটি ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন সংবিধানে কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবেন না। এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বোদ্ধ এমনকি সে বিবাহিত, না বিধবা এগুলো বিষয় নয়; বিষয় হচ্ছে, একটি মেয়ে টিপ পরেছে এবং সে একজন কলেজের শিক্ষক।’

শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সংগ্রহ করা ভিডিওতে স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবে পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো তদন্ত করে দেখছি, আদৌ এটা কোনো পুলিশ সদস্য, না অন্য কোনো সংস্থার লোক, সে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে বলা যাবে না। ওই এলাকায় কোন কোন ইউনিটের পুলিশ সদস্য ডিউটিতে ছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লতা সমাদ্দার মোটরসাইকেলের যে নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, ওই নম্বরের ‘ল’ সিরিজের একটি এবং ‘হ’ সিরিজের আরেকটি মোটরসাইকেল আছে। ‘ল’ সিরিজের বাইকটি ২০১৬ সালে গুলশান থেকে চুরি হয়ে গেলে সে সময় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর মালিক তার মোটরসাইকেলটি পাননি। পুলিশ এই মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে।

একই নম্বরের ‘হ’ সিরিজের মোটরসাইকেলটি যার নামে নিবন্ধন করা, তিন বছর আগে তিনি মিরপুরে এক বাসায় ভাড়া থাকতেন। পুলিশ সেই বাসায় গিয়ে জানতে পারে, প্রায় তিন মাস থাকার পর ওই ব্যক্তি বাসা পরিবর্তন করেছেন। বাড়িওয়ালা তার কোনো ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি। তবে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ মনে করছে, ওই ব্যক্তি পুলিশ সদস্য নয়।

মোটরসাইকেল নম্বরটির কোনো একটি অঙ্ক ভুল হয়ে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

যে এলাকায় তাকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই এলাকাটি তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের আওতায়। থানায় দেওয়া অভিযোগের বর্ণনা অনুযায়ী ট্রাফিকের কোনো পুলিশ সদস্য ওই এলাকায় ওই সময় ডিউটি করছিলেন কি না–জানতে চাইলে ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার সাহেদ আল মাসুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। গুরুত্বের সঙ্গে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, অভিযোগ করা শারীরিক বর্ণনা অনুযায়ী ট্রাফিকের সে রকম কোনো সদস্য সেখানে ডিউটি করছিলেন না। বরং লতা সমাদ্দার কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পরামর্শেই থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। তারপরও আমরা খোঁজ রাখছি, তদন্ত যারা করছেন তাদের সহযোগিতা করছি।’

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!