নারীদের যেসব ক্যানসার হয় সেসবের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। যেকোনো নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি’র হিসেবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬৭৮৩ জন। নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে ভোগেন। অল্প সংখ্যক পুরুষও এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
স্তন ক্যানসার কি?
স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, তা টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। পরবর্তীতে রক্তনালীর কোষ-রস ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যানসার।
স্তন ক্যানসারের কিছু লক্ষণ
* স্তনে চাকা বা পিণ্ড। স্তনে অধিকাংশ পিণ্ড বা লাম্প বেনাইন বা অক্ষতিকর। কিন্তু যদি পিণ্ড বা চাকা শক্ত হয়ে থাকে এবং তার অবস্থান সহজে পরিবর্তন না করে তাহলে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি।
* স্তনবৃন্ত দিয়ে অস্বাভাবিক রস বা রক্ত নির্গত হওয়া।
* স্তনবৃন্ত আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকা, অসমান বা বাঁকা হয়ে যাওয়া।
* স্তনের চামড়া ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া বা টোল পড়া।
* স্তনের চামড়ার রঙ পরিবর্তন, লালচে হওয়া।
* বগলতায় পিণ্ড বা চাকা
* স্তনবৃন্তের চারপাশে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া ও অস্বাভাবিক চুলকানি।
* স্তনের কোনো অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া বা ভারী বোধ হওয়া।
যে সব কারণে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি
* অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাওয়া।
* অধিক পরিমানে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।
* অত্যাধিক বিলম্বে সন্তান ধারণ।
* সন্তানকে বুকের দুধ পান না করানো।
* বন্ধ্যাত্বা জনিত কারণ।
* বংশগত কারণেও এ রোগ হতে পারে।
ঝুঁকি কমানোর উপায়
* নিয়মিত ব্যায়াম করেল ঝুঁকি কমে যায়।
* পরিমিত পানাহার করেল স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।
* নিজের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
* এছাড়া কিছু খাবার আছে যা নিয়মিত খেলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। যেমন: মাশরুম, ব্রোকলি, পালংশাক, ডালিম, ডিম, দুধ, স্যামন মাছ ইত্যাদি।
সচেতনতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। আর সেজন্য বাড়িতে বসেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
* ১৯-২০ বছর বয়স থেকে সকল নারীরই অন্তত একবার নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত। ইন্টারনেটে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন লিখে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিও দেখে শিখে নিতে পারেন।
* ৩৫-৪০ বছর বয়সে প্রত্যেক মহিলারই অন্তত ৬ মাস অন্তর একবার মেমোগ্রাম করানো উচিত, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
* যাদের বয়স ৪০-৪৯ তাদের প্রত্যেকের অন্তত ২ বছর পর পর একবার মেমোগ্রাম করানো উচিত।
* ৫০ বছরের উর্ধ্বে প্রত্যেক মহিলার বছরে একবার অবশ্যই মেমোগ্রাম করানো উচিত।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন
খুলনা গেজেট/কেএ