যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে বোমা হামলা মামলার প্রধান আসামি রাশেদ ওরফে কাউন্সিলর রাশেদকে অস্ত্র-গুলিসহ ডিবি পুলিশ আটক করেছে। তিনি পোর্ট থানা এলাকার দিঘিরপাড় গ্রামের মৃত আক্তার হোসেনর ছেলে। শনিবার (২ এপ্রিল) ভোররাত ৪টার দিকে তাকে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী গ্রাম থেকে ও বেনাপোলের একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বেনাপোল থানা পুলিশ আরো ৭ জনকে আটক করেছে।
যশোর ডিবি পুলিশ জানান, বেনাপোল বন্দরে বোমা হামলা মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর রাশেদ। যা সিসি টিভি ফুটেজ অনুসন্ধান ও আটক আসামিদের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। এ ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ শনিবার ভোররাতে ঝিকরগাছার গদখালী এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় তারা সুধীর আলীর বাড়ির একটি ঘর থেকে তাকে আটক করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার অস্ত্রের খোঁজ দেন। এরপর পুলিশ তাকে নিয়ে বেনাপোলে অভিযান চালায়। এসময় বেনাপোল বাজারের রজনী ক্লিনিকের পাশের আক্তারের পরিত্যক্ত বাড়ির মাটিতে পুতে রাখা পলিথিনে মোড়ানো একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, ৫ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন, ৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়।
এসময় কাউন্সিলর রাশেদ জানায়, এ অস্ত্র ও গুলি তিনি বিভিন্ন সময়ে অবৈধ কর্মকান্ডে ব্যবহার করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ মার্চ তার নেতৃত্বে বেনাপোল বন্দরে বোমা ও গুলি চালানো হয়। পুলিশ তাকে এ মামলায় আরো জিজ্ঞাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। এছাড়া, বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ এ মামলার আরো ৭ জনকে আটক করেছে। তাদেরকেও আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ঠিকাদারী দখলকে কেন্দ্র করে পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের অনুসারী পৌর কাউন্সিলর রাশেদ আলী ও যশোর-১ (শার্শা) আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের অনুসারী বর্তমান বন্দরের ইজারাদার ও শার্শা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান ওহিদের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন পথচারীসহ বন্দরের ২০ শ্রমিক। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহম্মেদ বাদী হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর রাশেদ আলী। ঘটনার পাঁচ দিন পর ডিবি পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন ভূইয়া বলেন, বেনাপোলে বোমা হামলার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেছে। এছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৩৬ জন আসামির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত কাউন্সিলর রাশেদসহ মোট ১৮ জন আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপন কুমার সরকার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এদিন ভোররাতে কাউন্সিলর রাশেদকে গদখালী থেকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে অবৈধ দুটি অন্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। এ বিষয়ে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধ করে কেউ রেহাই পাবে না। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
খুলনা গেজেট/কেএ