বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুপ্রতীম দেশ শ্রীলংকা আবারও বাংলাদেশের শরণাপন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে রাজাপাকসে সরকার।
আগের মতো এবারও মুদ্রা বিনিময়ের (কারেন্সি সোয়াপ) আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ ঋণ চেয়েছে শ্রীলংকা। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ২ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন।
আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি দেশটির এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এতে লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটন শিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারে।
রিজার্ভের এই সঙ্কট কাটাতেই বাংলাদেশের কাছে আরও ২৫ কোটি ডলার ধার চেয়েছে শ্রীলংকা।
কলম্বোতে মঙ্গলবার বিমসটেক (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা অ্যান্ড থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সামিটে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। জানান, উদ্ভূত সংকট নিরসনে আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের সামনেও অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
মাত্র এক বছরেরও কিছু আগে, কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেয় বাংলাদেশ। সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়েছে ঢাকা।
যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ কম, তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা এনে থাকে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। শ্রীলঙ্কার এই মুহূর্তে সেটি নেই।
কারেন্সি সোয়াপ বা আন্তঃদেশীয় মুদ্রা বিনিময় অনেকটা ‘ব্যাংক টু ব্যাংক লেন্ডিং’-এর মতো হওয়ায় ঝুঁকি অনেক কম। শ্রীলংকা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে যে বাণিজ্য হয়, সেই লেনদেন থেকে এই অর্থ সমন্বয় করে নেয়া যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রিজার্ভের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর ভারতের রিজার্ভ প্রায় ৬২০ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ২১ বিলিয়ন।
শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিলে। সে সময় দেশটির রিজার্ভ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার।
খুলনা গেজেট/ এস আই