চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় টিসিবি পণ্যের ক্রেতাদের পরিচিতি কার্ড (ফ্যামিলি কার্ড) তৈরিতে ১০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আরামডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেনের সহযোগী মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কতজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডেকে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। টিসিবির এই উদ্যোগে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির জন্য মোট ১ হাজার ৩৭৬টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ২ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনকে ২০টি কার্ড দেওয়া হয়। বিল্লাল হোসেন এর মধ্যে কিছু কার্ড বিতরণের জন্য তাঁর অনুসারী মজিবর রহমানকে দায়িত্ব দেন। মজিবর রহমান কার্ড বিতরণের সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা নেন। গতকাল বুধবার ইউনিয়ন পরিষদে পণ্য কেনার সময় ভুক্তভোগীরা টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭৪ হাজার ৫৫৬টি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করা হয়েছে।
আরামডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তেল–নুন দিয়ার কার্ড করার জন্যি মজিবারের কাচে ফটো দিয়ার সুমায় বলে যে ১০০ ট্যাকা দিয়ে যা। আমার কাচে ট্যাকা ছিল না। ধার কইরে ট্যাকাডা দিই।’ একই গ্রামের বৃদ্ধ জান মহাম্মদ বলেন, ‘গ্রামের সজীব এট্টা কার্ড দিয়েলো। ওই কার্ড দিয়ে জিনিস তুলে আনার পর বাড়ি আইলি বউমা জানায় যে তাঁর কাচ থেইকে মজিবার ১০০ ট্যাকা নিয়েচে।’ একই ধরনের অভিযোগ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মহাসীন আলী ও আবু সুফিয়ান।
ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আপনি যেইডা শুনেচেন, ওইডাই সঠিক। কার্ড বিতরণে মজিবার সমস্যা পাকি ফেইলেচে।’
অভিযুক্ত মজিবর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিল্লাল মেম্বার আমার পাঁচটা কার্ড দিয়েলো। ছবি তুলতি অ্যাকাক জুনার জন্যি ৪০ ট্যাকা করে খরজ হয়েলো। আমি গরিপ মানুষ, তাই ৫ জনির কাচ থেইকে ১০০ ট্যাকা কইরে নিয়েলাম। আজ বিকেলে চিয়ারমেনের কাচে ট্যাকাগুনু ফেরত দিয়ে দেব। জীবনে বাঁইচে থাকতি অ্যারাম কাজ কইরব না।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭৪ হাজার ৫৫৬টি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ২০ মার্চ থেকে কার্ডধারী উপকারভোগীদের কাছে ৪৬০ টাকার বিপরীতে ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল ও ২ লিটার সয়াবিনের তেল বিক্রি করা হচ্ছে। আজ ২৪ মার্চ পর্যন্ত ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ২৫৮ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএ