খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নুসরাতকে কারাগারে পাঠানো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে : এনসিপি
  চলতি মাসেই গার্মেন্টস কর্মীদের বোনাস, জুনের শুরুতে দিতে হবে বেতন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উৎখাত ও পদত্যাগ চাইলো ১৩ গণসংগঠন
দুই শিশুকে হত্যায় মায়ের জবানবন্দি

‘পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ’র পরামর্শে দুই সন্তানকে বিষ খাওয়াই’

গে‌জেট ডেস্ক

ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় দুই শিশুকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই শিশুর মা রীমা বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছে, চাল কলের চাতালে কাজ করার সময় সফিউল্লাহ’র সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়ায় সে। পরকীয়া থেকে সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনা করে দু’জন।

জবানবন্দিতে রীমা জানিয়েছে, চাতালে কাজ করার সময় চাল কলের শ্রমিক সফিউল্লাহ’র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সোফাই সরদার (সফিউল্লাহ) তাকে সুন্দর জীবনের লোভ দেখাতো। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এক হোটেলে তারা ৭ দিন ছিল। এমন কি যখন দুই সন্তানকে সে মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো তখনো সফিউল্লাহ হাসপাতালে গিয়েছিলো।

গত ১০ই মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিন নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যায় বলে নিহতদের মায়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। পরে ওই দুই শিশুর মায়ের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে গত ১৬ই মার্চ পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। গত বৃহস্পতিবার (১৭ই মার্চ) সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বিতীয় আদালতে রীমা স্বীকারোক্তি দেয়।

জবানবন্দিতে রীমা জানিয়েছে যে, আমার মা আমার অজান্তে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিল। বিয়ের পর দেখি যে, ইসমাইলের দুই চোখেই দৃষ্টি নেই। কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। বিয়ের ১৫ দিন পর আমি আমার বাপের বাড়িতে চলে যাই এবং মাকে বলি যে, আমি ইসমাইলের সঙ্গে সংসার করবো না। তখন আমার মা আমাকে বলে যে, সংসার চালানোর চেষ্টা করো’। মায়ের কথায় আমি তার সঙ্গে সংসার চালানো শুরু করি। এরপর ইসমাইলের বাড়িতে গেলে ইসমাইলের বাবা-মা, ভাই-ভাবি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে এবং আমাদের আলাদা হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ভাগে আমার স্বামী তার পিতার কাছ থেকে আধা শতাংশ জমি পায়। সে জমি বিক্রি করে দিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাই। বিয়ের এক বছরের মাথায় আমি চাল কলে কাজ করা শুরু করি।

জবানবন্দিতে আরও বলে, চাল কলে কাজ করার সময় সফিউল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয়। আমি তাকে মামা বলে ডাকতাম। চাল কলে কাজ করার সময় আরেক মিলের আরেক মহিলা কর্মী আনু মালার মাধ্যমে সফিউল্লাহ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, আমি তখন না করে দেই। কারণ আমার দুই সন্তান আছে। সফিউল্লাহ আমাকে আরও দুইবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সে আমাকে সুন্দর জীবনের লোভ দেখায়।

একটানা সাত দিন বিশ্বরোডের আবাসিক হোটেলে আমরা ছিলাম। সে আমাকে মাঝে মধ্যে উপহার প্রদান করতো।
জবানবন্দিতে সে আরও জানায়, চাল কলে কাজ করার সময় ওই কলের শ্রমিকদের সর্দার (সোফাই সর্দার) সফিউল্লাহ’র সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। আমি আমার শাশুড়ির ফোন ব্যবহার করে সফিউল্লাহ’র সঙ্গে কথা বলতাম। গত ৭ তারিখে (সোফাই) সফিউল্লাহ আমাকে ফোন করে বলে যে, আমার বিয়ের প্রস্তাবে তুমি রাজি কিনা। তখন তাকে আমি আমার দুই পুত্র নিয়ে অস্বস্তির কথা বলি। তখন সে বলে যে, পথের কাঁটা কীভাবে দূর করতে হয় তা আমি জানি। গত ১০ তারিখে সে আমাকে ফোন দিয়ে একটি পলিথিনে মিষ্টি দিয়ে যায়।

জবানবন্দিতে রীমা আরও জানায়, সে আমাকে বলে যে, মিষ্টি খাইয়ে দিলেই পথের কাঁটা দূর হয়ে যাবে। একটু পরেই সফিউল্লাহ তার শাশুড়িকে ফোন করে এবং তার বিলের ২০০ টাকা তাকে দেয়। শাশুড়ি বাড়িতে ফিরে আসার পর আমি আমার দুই ছেলের জন্য নাপা সিরাপ কিনতে তাকে ফার্মেসিতে পাঠাই। আমার শাশুড়ি সিরাপ কিনতে যাওয়ার সময় সফিউল্লাহ’র পূর্ব পরামর্শে দুই শিশুকে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে দেয়। আমার শাশুড়ি ৫ মিনিট পর নাপা সিরাপ নিয়ে আসে। পরে তাদের দুইজনকে আধা চামচ করে খাওয়াই যাতে সবাই মনে করে যে, ওষুধের ঝামেলার কারণে দুই সন্তান মারা গেছে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বাচ্চারা বমি করা শুরু করে। আমি তাদের দুইজনের মাথায় পানি ঢালা শুরু করি। পরে তখন পাশের মইনুল ডাক্তারের দোকানে নিয়ে গেলে সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বললে সেখানে নিয়ে যাই। সেখানে তাদের অক্সিজেন দেয়া হলে কিছুটা সুস্থ হয়। চিকিৎসকদের বলি যে, তাদের দুইজনকে নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়েছে। পরে তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রীমা আরও জানায়, সেখানকার চিকিৎসকেরা দুই বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে টক জাতীয় জিনিস খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। দুই ছেলেই বাড়িতে যাওয়ার বায়না ধরে। সফিউল্লাহও হাসপাতালে ছেলেদের দেখতেও গিয়েছিল। পরে একটি সিএনজিতে করে বিশ্বরোধ মোড়ে আসলে ছোট ছেলে পানি চাইলে তাকে পানি দেয়া হয়। তখন সে পানি খেয়ে নীরব হয়ে যায়। তখন বুঝলাম যে, সে মারা গেছে। বাসায় এসে বড় ছেলেকে শোয়ানো হলে তার শরীর নিথর হয়ে যায়। ঘটনার পর বাড়িতে মেম্বার ও চেয়ারম্যান ও পুলিশ আসে। তাদেরকে বলি যে তারা নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছে। পুলিশ আমার নম্বর নেয়। ‘আইনের লোক ফোন নম্বর নেয়ার পর আমার ভেতরে চিপা ধরে যায়। আমি ও সোফাই (সফিউল্লাহ) এ সন্তানের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি। আমার সহকর্মী শ্রমিক আনু মালাও জানতো না। আমি সুন্দর জীবনের লোভে জেনে বুঝে আমাদের সন্তানকে হত্যা করেছি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ই মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুই শিশু ইয়াসিন ও মুরসালিনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর প্রচার করা হয় নাপা সিরাপ খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় শিশু দুটির মা রীমাকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রীমা শিশু দুটিকে মিষ্টির সঙ্গে মিশিয়ে বিষ খাওয়ানোর কথা স্বীকার করে।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!