ঢাকার টিকিট পেতে মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন দৌলতপুর এলাকার সজল নামে এক ব্যক্তি। তিনিসহ চারজন বুধবার (২৩ মার্চ) ঢাকায় যাবেন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে টিকিট পেয়েছেন তিনি।
সজল বলেন, সকাল ৯টার দিকে স্টেশনে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র টিকিট হাতে পেয়েছি। কষ্ট হয়েছে, তবুও স্বস্তি যে টিকিট পেয়েছি।
শুধু সজল নয়, এমন ভোগান্তি ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশী সবাইকে পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সেখানেই বসে পড়ছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা কোম্পানি পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ কারণে কাগজে হাতে লেখা টিকিট (ম্যানুয়াল টিকিট) বিক্রি করা হচ্ছে স্টেশন থেকে। এতে সময় বেশি লাগছে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে টিকিট প্রত্যাশীদের।
নগরীর ময়লাপোতা এলাকা থেকে টিকিট কিনতে আসা আকিবুর ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টিকিট নিতে এসেছি। দুপুর দেড়টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়েছি। শুনেছি অনলাইনে টিকিট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এখানে এসে দেখি হাতে লিখে টিকিট দিচ্ছে। এ জন্য সময় বেশি লাগছে।
খুলনা থেকে পার্বতীপূরে যাবেন মুজাহিদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সকালে স্টেশনের কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে টিকিট পেয়েছি।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কিনতে আসা যাত্রীরা বলেন, স্টেশনে ছয়টি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র দুটিতে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আরও ২/৩টি কাউন্টার খোলা থাকলে সাধারণ মানুষকে এতো ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মী মনিরুল ইসলাম টিপু বলেন, টিকিটের জন্য মানুষ ভোর ৪টা থেকে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। তারা অনেকে আগের দিন রাতে এসেও বসে থাকছেন। কাউন্টারে সকাল ৯টা থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়ে মানুষ খুশি। যারা আসছেন একটু কষ্ট হলেও সকলেই টিকিট পাচ্ছেন। এ জন্য সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবারের (২৩ মার্চ) টিকিট আজ সকাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। বিকেল ৩টা থেকে আজ বিকেল ও রাতের ট্রেনের টিকিট দেওয়া শুরু হবে। স্টেশনের ৪ নম্বর কাউন্টার থেকে রূপসা, সাগরদাড়ী ও সীমান্ত এক্সপ্রেস এবং ৫ নম্বর কাউন্টার থেকে কপোতাক্ষ, চিত্রা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
স্টেশনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে অনলাইনে কম্পিউটারের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওই কাজের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল রেলওয়ে। সম্প্রতি ওই চুক্তি বাতিল হয়ে সহজ ডট কম নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি হয়েছে। এজন্য রেলওয়ের পুরো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
প্রতিদিন খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। গড়ে আটশর মতো টিকিট বিক্রি হয়। অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় এখন তা করতে হচ্ছে খাতা ও কাগজের মাধ্যমে। রোববার সকাল ৯টা থেকে একদিন আগের হাতে লেখা টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ রাত ১২টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত এভাবে চলবে। ২৬ মার্চ থেকে আবার অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা যাবে। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি কম হবে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুর রাশেদ বলেন, ট্রেন, সিটপ্লান, স্থান, যাত্রীর সংখ্যা সব কিছু খাতায় লিখে কাজ করতে হচ্ছে। কোনো কিছু ভুল হলেই যেমন যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে, তেমনি বিড়ম্বনায় পড়তে হবে রেলওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের। এসব কারণে অনেক কিছু যাচাই করে টিকিট দিতে হচ্ছে। এতে একটি টিকিট দিতে সময় লাগছে কমপক্ষে ৫ মিনিট। এজন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, গত ২১ মার্চ থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করা হবে।
স্টেশনে ছয়টি কাউন্টার থাকতেও দুটি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনবল সংকট রয়েছে। যেখানে ছয়টি কাউন্টারের জন্য ১৬-১৭ জন কর্মী প্রয়োজন, সেখানে রয়েছে মাত্র সাতজন। সারাদিন তাদের সিডিউল ভাগ করে কাজ করতে হচ্ছে। ছয়টি কাউন্টারের মধ্যে একটি খুলনা-কলকাতা রুটের বন্ধন ট্রেনের জন্য। সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাকি পাঁচটি কাউন্টারের তিনটি জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। জনবল আগে থেকেই কম।
খুলনা গেজেট/ এস আই