খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

উপকূলে পানির জন্য হাহাকার, মিলছে না প্রকল্পের সুফল (ভিডিও)

নিতিশ সানা, কয়রা

উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রায় গ্রীষ্মের শুরুতেই পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। তবে চারদিকে পানি আর পানি। কিন্তু সবটাই লবণাক্ত। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সংগ্রহে পাড়ি দিচ্ছে মাইলের পর মাইল। অনেকে বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুরের কাঁদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি।

চৈত্রের ক্ষরায় প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, লবণাক্ততা বেড়ে সুপেয় পানির আধার নষ্ট হওয়া, গভীর নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে মিলছে না সুপেয় পানি। দীর্ঘদিনের এ সমস্যায় উপকূলে জনপদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে।

উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরপাড়ে মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেটে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব জোরিনা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেটে আসায় হাফিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বিশ্রামে বসে পড়ে। এসময় তিনি বলেন, ‘‘পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দু’কলস করে পানি নিয়ে যাই।’’

তিনি আরও বলেন, বয়স হয়ে গেছে এখন আর হাটতে পারিনা। দুই বার পানি আনতে দিনের আধা বেলা লেগে যায়। আমাদের আশেপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়।

সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। এই ৭৭ বছর পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভাল হয় না। আমরা সবাই মিলে একবার একটা টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম কিন্তু তিন হাজার ফুট নিচেও মিষ্টি পানি পাইনি।

কালিকাপুর গ্রামের চন্দনা সানা বলেন, জলের কষ্ট দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকালে একটু ভাল থাকি তারপর বাকী সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। পুকুরের জল খেয়ে প্রায় কোন না কোন পেটের রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে আমাদের।

বাগালি ইউনিয়নের শ্রীপলতলা গ্রাম থেকে দু’টি বিল পাড়ি দিয়ে বামিয়া গ্রামের সরকারি পুকুরের পানি নিতে আসেন লতিকা মন্ডল। প্রতিদিন রান্না ও খাওয়ার জন্য ৪ কলস পানি লাগে। তবে এই পানি শুধু মাত্র খাওয়া ও রান্নার জন্য ব্যাবহার করা হয়। অনান্য কাজের জন্য নোনা পানি ব্যাবহার করা হয়।

এলাকাবাসী জানায়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই জনপদে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে বছর বছর চালু করে নিত্য নতুন প্রকল্প। সরকারি অনুমোদনের পর তারা প্রকল্পের প্রযুক্তি বসিয়ে দেয় কারও বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কাজ শেষে প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় স্থানীয় সরকার বা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে। আর নামমাত্র কমিটি করে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের ভার দিয়ে দেয় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির ওপর। এসব আয়োজনের কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রকল্পটি নষ্ট হলে উপকার ভোগীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে জোড়াতালি দিয়ে চলতে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একসময় প্রকল্পের অস্তিত্ব হারিয়ে যায়।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী সুমন রায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তাই উপকূলীয় অঞ্চলে পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। গ্রীষ্মকালে পুকুর খনন ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে এলাকার মানুষের পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত শতভাগ পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!