২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। সকাল সোয়া ১০টা। খালিশপুর থানাধীন বড় বয়রার দাসপাড়াস্থ হাজি ফয়েজ উদ্দিন সড়কের একটি পারিবারিক কবরস্থানে মানুষের ভিড়। পুলিশ এসে সেখান থেকে নীল রংয়ের পলিথিনে মোড়ানো পাটের তৈরি বস্তা থেকে এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করছে। লাশটি কার এ নিয়ে ওই এলাকায় বেশ গুঞ্জন শুরু হয়। লাশের খবর জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয় রাশেদ মল্লিক। কারণ একদিন আগে তার কন্যা নিখোঁজ হয়। লাশটি দেখে তিনি শনাক্ত করেন এটি তার ছোট মেয়ে জেসমিন নাহার। খুনী কে তা নিয়ে পুলিশও চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে খুনীর সন্ধান মেলে। সে আর কেউ নয় নিহত জেসমিনের প্রেমিক আসাদ সরদার ওরফে আসাদুজ্জামান সরদার ওরফে আরিফ। সে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নুরুল সরদারের ছেলে। আজ আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে খুলনা অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, জেসমিন নাহার বয়রা মহিলা কলেজ বাউন্ডারী রোডের বাসিন্দা রাশেদ মল্লিকের ছোট মেয়ে। সে দশম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ায় লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। বাড়িতে থেকে সেলাই মেশিনের কাজ করত। ঘটনার ছয় মাস পূর্বে আসাদউজ্জামান সরদার ওরফে আসাদ সরদার নামে এক যুবকের সাথে সম্পর্ক হয়। যেটি পরিবারের সকলে জানত।
২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর মায়ের নাকফুল ও উপটান কিনতে যাওয়ার কথা বলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফিরেনা জেসমিন। এ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে পরিবারের লোকজন। খোঁজ নিতে থাকে আত্মীয় স্বজনদের নিকট কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়না তাকে। পরে তার সন্ধান মেলে বড় বয়রার দাসপাড়ার জনৈক সিদ্দিক হেলালের পারিবারিক কবরস্থানে। তবে তাকে সেখানে জীবিত অবস্থায় নয় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মেয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রাশেদ মল্লিক। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসমিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আসাদ নামে একব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। ঘটনার পর থেকে জেসমিনের কথিত প্রেমিক পলাতক ছিল। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। যাদের মধ্যে অনুপম মহলদার ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি প্রদান করে। এছাড়া অপর আসামি হালিম পুলিশের নিকট হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিলেও আদালতে কোন জবানবন্দি দেয়নি। পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণ করা হলে সব রহস্য উদঘাটন হয়।
যেভাবে হত্যা করা হয় জেসমিনকে
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে চারটার পর জেসমিন বয়রা বন বিভাগ অফিসের সামনে আসাদের সাথে দেখা করে। তখন তারা দু’জন ছাড়াও হালিম ও ফরহাদ উপস্থিত ছিল। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে নিয়ে আসাদ বন্ধূ মোহরের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেও রাজি হয়ে যায়। একপর্যায়ে আসাদ কুপ্রস্তাব দিলে রাজি হয়নি জেসমিন। উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আসাদ তাকে গ্রীলের সাথে ধাক্কা দিলে ভিকটিমের মাথা ও নাক ফেটে রক্ত বের হয়। জেসমিন চিৎকার করলে আসাদ মুখ চেপে ধরে। সেখানে উপস্থিত বন্ধুরা হাত ও পা চেপে ধরলে তার মৃত্যু হয়। লাশ গুম করার জন্য মোহরের ছাদ থেকে চট ও পলিথিন এনে মৃতদেহ পেচিয়ে ওই কবরস্থানে ফেলে দেওয়া হয়। পরেরদিন জনৈক আকবর আলী ধুন্ধল পাড়ার জন্য বাসার চালে উঠলে কবরস্থানের ভেতর পলিথিনে মোড়ানো লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়।