খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  নিউইয়র্কে ছুরিকাঘাতে নিহত ২
ইসির আমন্ত্রণে ৩০ শিক্ষাবিদের ১৭ জনই সাড়া দেননি

সমঝোতা না হলে ভালো নির্বাচন দুরূহ হয়ে পড়বে : সিইসি

গে‌জেট ডেস্ক

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে ভালো নির্বাচন করা দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

রোববার বিকেলে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সংলাপ শেষে এ কথা বলেন সিইসি।

সংলাপে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের অবস্থান, আস্থা অর্জন, দক্ষতা অর্জন, ভোটারদের সচেতনতা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শ দেন আলোচকরা।

সিইসি বলেন, আমি প্রথম দিকে বলেছি, ভালো ইলেকশন করাটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তারা যদি সমানভাবে না আসেন, পলিটিক্যাল ক্লাইমেট, নির্বাচনে রাজনৈতিক আবহ যদি অনুকূল না হয়, দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি সমঝোতা না থাকে, পক্ষগুলো বিবদমান হয়ে যায়, তাহলে আমাদের পক্ষে ভালোভাবে নির্বাচন করাটা দুরূহ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে দেখছি তারা কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিচ্ছে না। তারা যদি নির্বাচন থেকে দূরে থাকে তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব না। তাহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায় কিছুটা ভাটা পড়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করব, আমাদের তরফ থেকে যত্ন করার জন্যে। আপনারা (সাংবাদিক) সহযোগিতা করবেন।

দলগুলোকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন রয়েছে আরও বেশি আস্থা অর্জন করার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন সিইসি। ভালো নির্বাচনের জন্য কমিশনের সদিচ্ছার অভাব হবে না। সামর্থ্যের অভাবের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ইসিকে জাফর ইকবাল যা বললেন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে যেন বলতে পারেন, আমি কাজটা ঠিকমতো করতে পেরেছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

সংলাপে অংশ নিয়ে জাফর ইকবাল এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এমন নির্বাচন হবে যেখানে জয়ী দল এবং হারা দল- দুটিই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হবে।’

ঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের ওপর জোর দিয়ে ইসি সদস্যদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আপনারা যত ভালো কাজই করেন, গালি খেতেই হবে। তাই গালি নিয়ে ভাববেন না।’

দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকে উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘তারাও দেশ নিয়ে ভাবেন। তারা কীভাবে ভোট দিতে পারেন সেটা দেখতে হবে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে অনেক জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল হচ্ছে। অনেকে অনেক টাকা খরচ করেও সমাধান পাচ্ছেন না। কমিশন এটা দেখলে এবং সমস্যার সমাধান করলে একটা পজিটিভ ইমপ্রেশন পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম সম্পর্কে বলা হচ্ছে এটা নাকি অনেক হাই লেভেলের টেকনোলজি। আসলে তা না। এটা খুবই লো লেভেলের টেকনোলজি। এখন তো অনেক হাইটেক জিনিসপত্র আছে। আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টরা ইভিএম নিয়ে প্রজেক্ট করে।’

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিতে রোববার বিকেলের এই বৈঠকের আয়োজন করেছে ইসি। বৈঠকে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন মাত্র ১৩ জন শিক্ষাবিদ।

সংলাপে অংশ নেওয়া ১৩ জন শিক্ষাবিদের মধ্যে ১১ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- সাদেকা হালিম, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, আবদুল মান্নান চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ড. আখতার হোসেন, আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, জাফর ইকবাল, বোরহান উদ্দিন খান, লাইলুফার ইয়াসমিন।

আমন্ত্রিত শিক্ষাবিদরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম; আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক এম জাফর ইকবাল, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী; বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসাইন; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম; লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম; বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ; বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, ইউল্যাবের জেনারেল এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক; বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হাসান ও তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম, অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার।

রীতি অনুযায়ী এর আগের কমিশনগুলোও দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। ২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু করা এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন দুইবার সংলাপে বসেছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়ও সংলাপ হয়েছিল। বিগত নুরুল হুদা কমিশনও সংলাপ করেছিল নির্বাচনী অংশীজনদের নিয়ে। তবে নবনিযুক্ত হাবিবুল আউয়াল কমিশনের মতো দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মাসেই সংলাপে বসেনি কোনো কমিশন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নতুন কমিশন সবার সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরির কাজে হাত দিতে চায়। প্রয়োজনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও বিভিন্ন দল ও মহলের সঙ্গে বসতে পারে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!