কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমনটাই বলছে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রখ্যাত জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা। বাংলাদেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী করোনায় মারা গেছে ২৯ হাজার ১০৫ জন। কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী মৃত্যুর আসল সংখ্যা এর ১৫ গুণ। মহামারির দুই বছরে সরকারি হিসেবের থেকেও অতিরিক্ত ৪ লাখ ১৩ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষকরা।
বৃহস্পতিবার ওই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ল্যানসেট। এতে অবশ্য জানানো হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কোভিডে মৃত্যুর ভুল হিসাব প্রচার করা হয়েছে। বিশ্বের সরকারগুলো যে তথ্য দিয়েছে তাতে এই মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ৫৯ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় সারাবিশ্বে মৃত্যু হয়েছে হিসাবের চেয়ে তিন গুণ। অর্থাৎ গত দুই বছরে ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সরাসরি বা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে কোভিডে ৯.২ জন মারা গেছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই হার প্রতি এক লাখে ১৩৪.৭ জন। গবেষণায় দেখা যায়, করোনায় সাতটি দেশে বিশ্বের মোট মৃত্যুর অর্ধেক ঘটেছে। এগুলো হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। ভারতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে দেশটিতে ৪ লাখ ৯০ হাজার মানুষ কোভিডে মারা গেছেন। কিন্তু ল্যানসেটের গবেষণা বলছে দেশটিতে কোভিডে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ৪১ লাখের বেশি। করোনায় বিশ্বে যত মানুষ মারা গেছে, তার ২২ শতাংশই ঘটেছে ভারতে।
বিবিসি জানিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় মহামারির বছরগুলোতে কী পরিমাণ বেশি মৃত্যু হয়েছে তার তুলনা করেই এ সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা। এ জন্য তারা বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে আছে, ওয়ার্ল্ড মর্টালিটি ডাটাবেজ, দ্য হিউম্যান মর্টালিটি ডাটাবেজ এবং দ্য ইউরোপিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস। এই অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা দেশ ও অঞ্চলভেদে আলাদা বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে বৈশ্বিক হিসেবে এই সংখ্যা ছিল প্রতি এক লাখ জনে ১২০ মৃত্যু। অর্থাৎ, স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় প্রতি লাখে ১২০ জন মানুষের বেশি মৃত্যু হয়েছে মহামারি কালে। সামগ্রিক হিসেবে গত দুই বছরে মোট ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ অতিরিক্ত প্রাণ হারিয়েছে।
যেসব দেশে সবথেকে বেশি অতিরিক্ত মৃত্যু দেখেছেন গবেষকরা তা হলো, বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, এস্বাতিনি, উত্তর মেসিডোনিয়া ও লেসোথো। অপরদিকে সবথেকে কম পাওয়া গেছে আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানে। বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের কাছাকাছিই রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি হিসাবে ৯ লাখ ৬০ হাজার মৃত্যুর কথা বলা হলেও প্রকৃত মৃত্যু ১১ লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি। বৃটেনে এ সময়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমণে মারা গেছে। দেশটিতে প্রতি ১ লাখে ১৩০ জন এ রোগে মারা গেছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই