ইউক্রেনে যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধে বিশ্বের খাদ্য বাজারে প্রায় সবকিছুর দাম বাড়ছে। ফলে খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে ধনী-গরিব সব দেশ।
নিষিদ্ধ ঘোষণার মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমাদনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার জ্বালানির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ইউরোপও ধাপে ধাপে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে।
এদিকে, রাশিয়ার জ্বালানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে এমন খবরেই ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম লাফিয়ে ১৩০ মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। দাম উঠেছিল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে খাদ্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইতোমধ্যে পৃথিবী জুড়ে এর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে।
অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি স্টাডিজ জানিয়েছে, ২০২১ সালে বিশ্বের মোট তেলের ১৪ শতাংশ এসেছে বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ, ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে দ্বিতীয় রাশিয়া থেকে ৷ রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপে, ৩৫ শতাংশ যায় এশিয়ায় ৷
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু রাশিয়া নয়, এই নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা খোদ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে লাগবে।
টানা দুই বছর করোনার প্রকোপে বিশ্বের সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। নানা কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ মানবজাতিকে আরও ভয়ঙ্কর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ই বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের গুরুত্বপূর্ণ যোগানদাতা। একই সঙ্গে ওই দুই দেশ বিশ্বের ৩০ শতাংশ গম রপ্তানি করে। বুধবার ইউক্রেন সরকার এ বছরের জন্য বার্লি, চিনি ও মাংসসহ কৃষিপণ্য রপ্তানির উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে পণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রাশিয়ার গ্যাসের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এটির দামও হু হু করে বাড়ছে। যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে সারের দাম। আর সারের দাম বাড়া মানে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে।
জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। এ মাসে যা আরো বাড়ছে।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়া নিজ দেশে রান্নার তেলের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে রপ্তানি হ্রাস করছে বলে জানান দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ লুফতি। ফলে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের দামও বেড়ে গেছে। এদিকে, সয়াবিন তেলের দাম গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বছর সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়াও, শিকাগো হুইট ফিচার্স এ এই বছর গমের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। একে তো যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার চীনের গম উৎপাদনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের খবর খুবই দুঃখজনক। খরার কারণে যুক্তরাষ্ট্রেও গম উৎপাদন অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম।
সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি বিভিন্ন পন্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বুলগেরিয়াও রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে পারে বলে জানিয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই