খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল করেছে সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা, ১১টায় বৈঠক, তারপর নতুন সিদ্ধান্ত

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ৩৬ হাজার কোটি টাকা উধাও

গে‌জেট ডেস্ক

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ইস্যুতে দরপতনে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজারটির সাড়ে ২০ লাখ বিনিয়োগকারীর অধিকাংশরাই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বিক্রির অর্ডার দিয়েও শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না। তাতে আরও বেশি আতংকিত হয়ে পড়েছেন তারা।

ফলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত মাত্র আট কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ৫০০ পয়েন্ট। কমেছে লেনদেন হওয়া প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম। তাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাতে বিশ্বের বড় বড় পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আতংক বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় আসতে পারে— এ শঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর তাতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন করে ধস নেমে এসেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোনো সম্পর্কে নেই। ফলে এ ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সম্প্রতি দরপতনের পেছনে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে। এটা কোনো যৌক্তিক কারণ নয়। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি বলেন, আমি পুঁজিবাজারে দরপতনের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এখন যারা গুজবে ও আতংকে শেয়ার বিক্রি করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করছেন। এ সময়ে যারা শেয়ার কিনছেন তারাই লাভবান হবেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। সেই দিন থেকে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। তারপর থেকে গতকাল (৭ মার্চ) পর্যন্ত সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪৯২ পয়েন্ট। এর মধ্যে রোববার ও সোমবার দুইদিনে যথাক্রমে সূচক কমেছে ৫৭ ও ১৮২ পয়েন্ট। এ দুইদিনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১৬ হাজার ৪৯২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আর ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ৩৫ হাজার ৮৬৮ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

এদিকে আজ মঙ্গলবারও সূচক পতনের মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ বেশি রয়েছে। ফলে সূচক পতনের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা অহেতুক প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই হবে।

বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা দরপতনের কোনো যৌক্তিক কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। বিনিয়োগকারীরা ঠিক কী কারণে শেয়ার বিক্রি করছে তা আমি বুঝতে পারছি না।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীরা আতংকিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বিনিয়োগকারী, ব্রোকার হাউজ এবং পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তো শেয়ার বিক্রি করছে না, করছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আমাদের বাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভর, তাই বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে বাজারে। মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে আগামী দুই-চার দিনের মধ্যেই। তারপর দেখবেন এই বিনিয়োগকারীরাই শেয়ার বিক্রির জন্য আফসোস করবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি কমাতে এই মুহূর্তে প্রয়োজন বাজারকে সাপোর্ট দেওয়া, কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মার্কেট সাপোর্ট দিচ্ছে না। কারণ তাদের ফান্ডের প্রয়োজন। কিন্তু ফান্ড নেই।

বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে উত্তোলনের জন্য আইসিবির মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সক্ষমতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!