খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৩
  কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
  আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ফখরুল-রিজভী-আমির খসরু
  ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণু হত্যা : একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা রেশমা আজ সরকারী কর্মকর্তা

নিতিশি সানা, কয়রা

হাসপাতালে জন্মের পরে নার্স যখন পরিবারের এক সদস্যের কোলে তুলে দেয় তখন তিনি তাকে (শিশুকে) ছুড়ে ফেলে দেয়। ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ দরিদ্র পরিবারে মেয়ে হয়ে জন্ম হওয়ায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি গ্রামে বেড়ে উঠতে থাকে ছোট্ট শিশুটি।

নাম তার রেশমা আক্তার। পিতা দিন মজুর আরশাদ আলী। পরিবারে তেমন স্বচ্ছলতা ছিল না। স্কুলের গন্ডি শেষ না হতে ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শুরু তার বিয়ের চাপ। তবে পিতার সহযোগিতায় ২০০৭ সালে এসএসসি পরিক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তির্ণ হয়ে স্কুলের গন্ডি পার করেন। এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়। শুরু হয় জীবনের আরেকটি অধ্যায়। নতুন সংসার। সারাদিন সংসারের ঘানি টেনে রাতে সুযোগ পেলে কোন রকমে বই নিয়ে বসতেন। গর্ভে ৭ মাসের সন্তান নিয়ে তিনি এইচএসসি পরিক্ষা দেন। এরই মাঝে কোল আলো করে আসে ফুট ফুটে সন্তান। এইচএসসি পরিক্ষায়ও তিনি সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হন।

অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও কৃতকার্য না হতে পারায় তার পিতা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তখন বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো ইনশাআল্লাহ। তবে সেটা স্বপ্নই রয়ে যাবে,বাস্তবে সম্ভব বলে মনে হয়নি তার। ভাবতেও পারেননি সেটা বাস্তব হবে।

প্রতিকূলতার মধ্যেও পরের বছর সুযোগ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তখন আরেক বাঁধা সামনে এসে দাঁড়ায় ।একদিকে সংসার সামলানো, অন্যদিকে সন্তান নিয়ে ঢাকায় যেয়ে লেখাপড়া করার জটিলতায় নতুন চাপের মুখে পড়েন তিনি। তবে স্বামীর সহযোগীতায় অবশেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসার সামলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করেন তিনি। সেখান থেকে প্রথম বিভাগ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করেন। তখনও তাকে দিয়ে কিছু হবেনা বলতেন অনেকেই। এরপর ৩৭ তম বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে তিনি নন-ক্যাডার হিসেবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে চাকরি পেয়ে প্রমাণ করেন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রবল ইচ্ছা থাকলে আল্লাহর রহমতে সফলতা আসে। এখন তিনি পরিবারের সকলের চোখেরমনি। তার পরিবার মেয়ে হওয়া নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তা করে না। বরং মেয়ে চায়।

২০২০ সালের ৩১ আগস্ট কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। রয়েছেন একই কর্মস্থলে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার খুলনা গেজেটকে জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমি স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার সৌভাগ্য যে শিশু ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি । আমার ইচ্ছে নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা। আমাদের সমাজে অনেক নারী আছেন, যারা বিভিন্ন প্রতিকূলতায় পিছিয়ে পড়ে। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। হাল না ছেড়ে ধৈর্য্য ধরে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ তাদের জন্য । একদিন সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। যারা বলতো আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আজ তাদের আদরের আমি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!