খুলনা পাইকগাছার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছেনা খোলা সয়াবিন তেল। কাঁচা মরিচ আবারো সেঞ্চুরি করেছে। বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। সব মিলিয়ে কয়েকদিন যাবত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে উপজেলার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। আর কাঁচা মরিচ একশ’ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে আবার কয়েকটি হাট-বাজারের একাধিক দোকান থেকে এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল থাকলেও উধাও হয়ে গেছে খোলা তেল। প্রতিটি এক লিটারের বোতল দোকানীরা ১৮০/১৮৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনির একাধিক কাঁচামাল ব্যবসায়ী জানান, তারা পাশ্ববর্তী তালা ও আঠারো মাইল বাজার থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল কিনে নিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে সকল কিছুর দাম বেড়েছে। আর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচেও প্রভাব পড়েছে তাই বাধ্য হয়েই স্বল্প লাভে আগের তুলনায় বেশি দামে নিত্যপণ্য বিক্রয় করতে হচ্ছে তাদের।
কপিলমুনি বাজারের একাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত প্রতিবছর এ সময়ে দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এবার খুব বেশী বাড়েনি। কয়েকদিন আগের ভারি বৃষ্টিতে দাম বেড়ে তা আবার কমেও গিয়েছিল। তবে যেখান থেকে তারা পেঁয়াজ নিয়ে আসেন সেই সকল মোকামগুলোতে পেঁয়াজের সংকট থাকায় দাম বেড়েছে কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা। পরিবহন খরচও বেড়েছে। আর ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। পুরোপুরি চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তারা।
উপজেলার কাশিমনগর বাজারের মুদি দোকানি দিপক কুমার সাধু জানান, তেলের দাম অস্বাভিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার তিনি বাইরে থেকে খোলা সয়াবিন তেল ড্রামপ্রতি ৪০০ টাকা বেশিতে কিনেছেন। পরিবহন খরচও বেড়েছে প্রতি ড্রামে প্রায় ৫০ টাকা। তবুও ১৮০ টাকা এখনও খোলা সয়াবিন বিক্রয় করছেন তিনি। আর ১ ও ২ লিটারের সামান্য কয়েকটি বোতল আছে তার দোকানে। কোম্পানির লোক ঠিকমত আসছে না বলে চাহিদামত অর্ডার করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। আর তেল সহ নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে ক্রেতারা দোকানিকেই বিড়ম্বনায় ফেলছেন। অনেকে আবার দাম শুনেই চড়াও হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সরেজমিনে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মধ্য ও নিন্ম আয়ের কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেউ দিনমজুর কেউ বা আবার ভ্যান চালক। একদিনে তারা যা আয় করেন তাতে কোন রকম সংসারটাই এখন আর চলছে না। বাজারে আসলেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরিবারে তারাই আবার একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাই একার রোজগারে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বলেও জানান তারা।
ক্রেতাসাধারণের একটি বড় অংশ আবার নিত্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করে বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেল, মশলা, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না। আবার একবার যে পণ্যের দাম বাড়ছে, তা আর কমছে না।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে কারণে অকারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে বলেও দাবি করেন তারা।
সর্বশেষ নিয়মিত বাজার মনিটরিংসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার মধ্য ও নিন্ম আয়ের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
খুলনা গেজেট/ এস আই