খুলনার ডুমুরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জমি দখলের মহোৎসব চলছে। পাউবোর নোটিশ পাওয়ার পরও থেমে নেই এ কার্যক্রম। এছাড়া এর আশেপাশেও চলছে দখলের মহোৎসব। কোথাও শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস্য ঘের। আবার কোথাও গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা ইমারত। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে প্রতারণার মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত জমি ক্রয়কারি ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও সাবেক ইজারাপ্রাপ্ত মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সাহস ইউনিয়নের কাজিরহুলা থেকে চটচটিয়া অভিমুখী পাউবোর ২৯ নং পোল্ডারে ভেঁড়ীবাঁধসহ অধিগ্রহণকৃত জায়গায় শ্রেণী পরিবর্তন করে মৎস্য চাষ ও পাকা ইমারত নির্মাণের কাজ চলছে।
নোয়াকাটি গ্রামস্থ আব্দূল বারিক শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম শেখ অভিযোগ করে বলেন, গোলাইমারি মৌজায় এস এ ১৯,২০,২১,২২ ও ২৩ দাগ, যা বিআরএস ৫১,৫৪ নং দাগে ১.৫৫ একর জমি আমার বাবা বারিক শেখ ইজারা পায়। সেই থেকে প্রায় ৩০ বছর আমরা ভোগদখল করে আসছি। এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার বয়ারডাঙ্গা গ্রামস্থ ডাক্তার শামিম আহমেদ ও তার ভাই আব্দুল হালিম নাকি সরকারি ওই জমি ক্রয় করেছে। এমনটি দাবি করে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় তার দখলীয় জমিতে থাকা মৎস্য ঘেরের ভেঁড়ীবাঁধ কেটে স্কেভেটর দিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে নুতন ভেঁড়ীবাঁধ ও খানা-খন্দ তৈরি করছে। এতে আমি দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বিষয়টি লিখিতভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন ,ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবশালীদের তান্ডব সইতে না পেরে অবশেষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খুলনা আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছি। যার নং-এমপি-১২৪/২০২২।
এ প্রসঙ্গে খুলনা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাসনাতুজ্জামান জানান, ২৯নং পোল্ডারে একাধিক ব্যক্তি অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ ও শ্রেণি পরিবর্তন করে মৎস্য চাষের নামে ভূমি জবর-দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিষয়টি জানা আছে। ইতোমধ্যে ওই জবর দখলকারিদের বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার শামিম আহমেদ ও তার ভাই আব্দুল হালিম বিআরএস ৫১, ৫৪ দাগে আমাদের অধিগ্রহণকৃত জমি প্রতারণার মাধ্যমে ক্রয় করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আব্দুল কুদ্দুস শেখ, ওয়ালিদ শেখসহ একাধিক ব্যক্তির সহায়তায় জবর দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এই মুহূর্তে ভেঁড়ীবাঁধ অপসারণ, দখলমুক্ত ও জমি ক্রয় দলিল বাতিল করতে ক্রেতা ও জবর দখলে সহায়ক ব্যক্তিদের ১৭ফেব্রুয়ারি নোটিশ দেয়া হয়েছে। যা অমান্য করলে সরকারি জমি ক্রয়, শ্রেণি পরিবর্তন ও দখল করার জন্য প্রতারণা মামলা দায়ের করা হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দূল হালিম বলেন, আমি নোটিশ পেয়েছি। আমাকে সাতদিনের মধ্যে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্যই আমার কাগজপত্র নিয়েই জবাব দিব।
অপরদিকে কাজিরহুলা এলাকায় গ্রাম্য চিকিৎসক হরিদাশ মন্ডল পাউবোর ভেড়ীবাধের উপর পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও দিঘলিয়া মোড়ে একইভাবে রনজিত কুমার, তুষার কান্তি,গৌতম ঢালী ইমারত নির্মাণ করে আসছে। অবৈধ এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপরও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদাররা লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটছে। বিষয়টি আমার জানা আছে এবং পাউবো প্রদত্ত একটি অনুলিপি নোটিশ পেয়েছি। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে আমার সর্বাত্নক সহযোগিতা থাকবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই