খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সামাজিক গুরুত্ব

ড. খ. ম. রেজাউল করিম

১. ভূমিকা : প্রত্যেক মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা হলো সর্বাধিক প্রিয়। কারণ এ ভাষাতেই মানুষ তার চেতনাকে লালন করে। আশা-নিরাশা, আনন্দ-বেদনায় হৃদয়ের গভীরে জাগ্রত ভাব-অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে। এ মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালী জাতি আন্দোলন করেছে এবং জীবন বিসর্জন পর্যন্ত দিয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তবে মুখের ভাষার জন্য আন্দোলনের ইতিহাসে বাঙালিরা একক নয়, আরো দৃষ্টান্ত আছে আগে ও পরে। দ্বাদশ শতকে ইংল্যান্ডের ইংরেজিভাষী মানুষকে লাতিনের পরিবর্তে ইংরেজি ভাষায় ভাবতে, বলতে ও লিখতে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় বিগত শতকের ষাট দশকের শুরুতে বাংলা ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। তবে ব্যপকতায় ও গণমানুষের সম্পৃক্ততায় বাঙালির ভাষা আন্দোলন ছিল বৃহৎ পরিসরের। এ আন্দোলন বাঙালির আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। একুশের বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শে বাঙালির সামাজিক জীবন যে অপরিমেয় সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, তা একাত্তরের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সময়েও বহমান। সঙ্গত কারণেই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাঙালির সামাজিক জীবনে একুশের অবদানকে নতুন করে মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। একথা সত্য যে, সামাজিক গুরুত্বের পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে এবং এ সমস্ত দিক নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ও বিশ্লেষণ থাকলেও একুশের সামাজিক তাৎপর্যের দিকটি অনেকখানি উপেক্ষিত। সঙ্গত কারণেই বর্তমান প্রবন্ধে মহান একুশের সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

২. মাতৃভাষার গুরুত্ব : ভাষা একটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতও বিদ্যমান। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী গুস্তাভ লা বোঁ-র বক্তব্য হল, ‘ভাষার চেয়ে অধিক জটিল, যৌক্তিক এবং বিস্ময়কর আর কী হতে পারে? সবচেয়ে জ্ঞানী শিক্ষাবিদ এবং সবচেয়ে সম্মানিত বৈয়াকরণ হয়ত ভাষা ব্যবহারের বিধিসমূহ নির্দেশ করতে পারেন; কিন্তু তারা ভাষা তৈরি করতে অক্ষম‘। এ মন্তব্যে ভাষা বিকাশের স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী প্রক্রিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা বিশেষজ্ঞদেরও পক্ষেও সম্ভব নয়। মুসলিম জাতির পিতা হয়রত ইব্রাহিম (আঃ) বলেছেন-‘জ্ঞানীদের উচিত তাঁর ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ করা।’ আবার প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন- ‘প্রত্যেকেরই শিক্ষার মাধ্যম তার মাতৃভাষা হওয়া উচিত। অপর ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদান অসম্পূর্ণ শিক্ষারই নামান্তর।’ মাতৃভাষার সপক্ষে এমন হাজারো উক্তি রয়েছে যা অন্যান্য ভাষার উপর মাতৃভাষার গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করতে সহায়তা করে।

৩. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস এই দিনটি। ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখা যায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। এ আন্দোলনের ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ’লাহোর প্রস্তাব’। এ প্রস্তাবে উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাসমূহে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। প্রস্তাবটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজনই হত না। কিন্তু ১৯৪৬ সালের দিল্লি সম্মেলনে তদানীন্তন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে লাহোর প্রস্তাবকে আংশিক সংশোধন করে একাধিকের পরিবর্তে উভয় অঞ্চল মিলে একটি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এরমধ্যে ভারত রাষ্ট্রের গঠন বিশ্বের আর দশটি দেশের মত হলেও ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তানের গঠনটা ছিল ভিন্নধর্মী। দেশটির মানচিত্রের পূর্বাংশ (তদানীন্তন পূর্ববাংলা) ও পশ্চিমাংশ (তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান) ছিল ১৬০০ কিলোমিটার বিদেশী ভূখন্ড (ভারত) দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এই বিভক্তির ভিত্তি ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ’দ্বিজাতিতত্ত্ব নীতি’, যা ভাষা ও সংস্কৃতির মত মৌলিক বিষয়াবলীকে অবজ্ঞা করে। তবু এক ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধশালী করে তোলার উদ্দীপনা তদানীন্তন পূর্ব-বাংলার জনগণকে উদ্দীপ্ত করে।

নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল বাংলা ভাষাভাষী। ১৯৫১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬.৪০ শতাংশ ছিল বাঙালি, যাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। এছাড়া ভাষা হিসেবে বাংলা ছিল সমৃদ্ধতর। তাই নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আশা করেছিল, পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হবে বাংলা। কিন্তু দেশ ভাগের অব্যবহিত পর থেকেই পাকিস্তানের মাত্র ৩.২৭ ভাগ জনগণের মাতৃভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চলে। এ অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের অধিবেশনে কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রাজকুমার চক্রবর্তী একটি সংশোধনী প্রস্তাবে ইংরেজি ও উর্দুর সাথে বাংলাকেও গণপরিষদের সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা ভোটাভুটির মাধ্যমে অগ্রাহ্য করা হয়। ফলশ্রুতিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ’রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। এই ’রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ একই বছরের ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে। উক্ত দিনে সচিবালয়ের বাইরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে একত্রিত ছাত্রদের উপর পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়। এ প্রেক্ষাপটে পরের দিনগুলোতে আন্দোলন আরো জোরদার হয় এবং সাধারণ জনগণ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সাথে ১৫ মার্চ আলোচনায় বসতে বাধ্য হন এবং সে সভায় ৮ দফা চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে ভাষার বিষয়টি উপেক্ষা করা হলে ছাত্ররা ১৭ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদের দিকে মিছিলসহকারে অগ্রসর হয়। যদিও পুলিশের লাঠিচার্জ ও বন্দুকের ফাঁকা গুলির মুখে সে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, তবুও এ আন্দোলন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তার আহবানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯ মার্চ পূর্ববাংলা সফরে আসেন এবং ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে একমাত্র উর্দু। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে সভার কোন কোন অংশ থেকে মৃদু ’নো নো’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়। এর তিনদিন পর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন বাঙালিরা তাদের প্রদেশের সরকারি ভাষারূপে যে কোনো ভাষা নির্বাচিত করতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে অবশ্যই উর্র্দু। এতে উপস্থিত গ্রাজুয়েটবৃন্দের পক্ষ থেকে যেমন- তাৎক্ষণিক জোরালো ’নো নো’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়, তেমনি গভর্নর জেনারেল-এর এই অবিবেচনাসুলভ মনোভাব পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলে ও সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ, সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করে। ঐ দিনেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি দল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে উপস্থাপিত যুক্তি সহকারে স্মারকলিপি পেশ করে। তবে জিন্নাহর পূর্ব বাংলা সফর ভাষা আন্দোলনকে খানিকটা হলেও স্তিমিত করে। ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বরে ভাষার প্রশ্নে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পাকিস্তান গণপরিষদের সাংবিধানিক মূলনীতি কমিটি যে অন্তবর্তী প্রতিবেদন গণপরিষদে পেশ করে, তাতে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়। এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদে ঢাকায় একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়, যার উদোগে ৪ ও ৫ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় মহাসম্মেলন ও ১২ নভেম্বর পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। অবশেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নিলে ভাষার প্রশ্নটি চাপা পড়ে যায়। তবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন যেন একেবারে নিঃশেষ হয়ে না যায় সে উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উৎসাহী ও সংগ্রামী ছাত্র ১৯৫০ সালে ’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। এরপর ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে ভাষা আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হয় যখন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন পূর্ববাংলা সফরে এসে এক জনসভায় ঘোষণা দেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এ উক্তির প্রতিবাদে ’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ও সভা আহবান করে। সেই সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ছাত্র ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া ভাষা আন্দোলনকে ব্যাপক করার উদ্দেশ্যে ৩১ জানুয়ারি বিকালে ঢাকার বার লাইব্রেরিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে এক সর্বদলীয় সভার মাধ্যমে ’সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। উক্ত পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচী সমর্থন করে এবং সাথে সাথে ২১শে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল ও সভার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ পরিষদের কর্মসূচির প্রতি প্রাদেশিক সরকার কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে এবং ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩ টা থেকে ১ মাসের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই ঘোষণায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাস্তায় নামে। যার প্রেক্ষাপটে পুলিশের গুলিতে রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমান, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার এবং আবদুল সালামসহ আরো কিছু ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মাতৃভাষার সম্মান ও অধিকার সমুন্নত রাখতে প্রাণ বিসর্জনকারী এইসব ছাত্র-জনতাকে জাতি শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভাষা শহীদদের এ আত্মাহুতি একদিকে যেমন ছিল মর্মান্তিক, তেমনি ছিল গৌরবোজ্জ্বল। এর প্রতিক্রিয়ায় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে যে জনরোষের সৃষ্টি হয় তার প্রভাব ছিল সূদুরপ্রসারী। অবশেষে ১৯৫৬ সালে প্রণীত পাকিস্তান সংবিধানে বাংলা ভাষাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

৩. একুশের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব : আসলে বাঙালি জীবন ও বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা রেঁনেসার মতই তাৎপর্যবহ ও সূদুরপ্রসারী। বায়ান্নোর যে ভাষা আন্দোলন, তা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রয়াস এবং সে সময়কার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হঠকারিতা থেকে মুক্তির জন্য অঙ্গুলী নির্দেশ করা। সামাজিক বঞ্চনা-বৈষম্য এ সময়ে পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের মনে গভীরভাবে গ্রোথিত হতে থাকে। বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারিতে এসে তার চরম বিকাশ ঘটে। একুশে ফেব্রুয়ারি সংক্রান্ত আলোচনায় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকটি সর্বাগ্রে বিবেচনায় এলেও এর সামাজিক গুরুত ¡ও তাৎপর্য অপরিসীম, যা নিচে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হল-

১. মূলত ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে কেবল সুদূর প্রসারী প্রভাবই ফেলেনি, এর সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবিধানিক প্রশ্নও জড়িয়ে পড়ে। যেমন- কেন্দ্রীয় গণপরিষদে পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা আনুপাতিক আসন সংখ্যা, প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দাবি, কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙালিদেরকে অধিক সংখ্যক নিয়োগ এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হয়। অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পূর্ব বাংলার জনগণ সর্বপ্রথম তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে। পূর্ব বাংলার জনগণ যে পশ্চিম পাকিস্তানীদের থেকে আলাদা এবং তাদের দাবি যে স্বতন্ত্র খাতে প্রবাহিত হতে পারে- এই শিক্ষা মূলত ভাষা আন্দোলন থেকে আহরিত হয়।

২. ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন মাত্র। কালক্রমে তা একটি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক আন্দোলনে রূপ নেয়। এ সময়ে অনেক সমাজসচেতন ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। ফলে পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের চিন্তা-চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটে। তাই দেখা যায়, পরবর্র্তী আন্দোলনসমূহে ভাষা আন্দোলনের এই প্রেরণা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। ফলশ্রুতিতে ভাষা আন্দোলন এক ধরনের প্রাদেশিকতাবাদের জন্ম দেয়। এরপর যখনই পূর্ব বাংলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন দাবি উচ্চারিত হয়েছে তখনই তা পূর্ব বাংলাবাসীর সমর্থন অর্জন করেছে।

৩. ভাষা আন্দোলন এদেশের ছাত্র সমাজকে প্রচ্ছন্নভাবে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার ছাত্ররা প্রথম প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে তমদ্দুন মজলিশ, পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং ’ছাত্র ইউনিয়ন’ পরবর্তী আন্দোলনসমূহে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড, ন্যায়-অন্যায়, দূর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ উচ্চারণ করে ছাত্র সমাজ। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছাত্র সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতঃ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

৪. ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি সকল পেশার মানুষ এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক সংহতি বা ঐক্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সৃষ্টি হয় এবং এ আন্দোলনের ফলে পূর্ব বাংলায় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। পরবর্র্তীতে বিভিন্ন আন্দোলনসমূহে তার পূনরাবৃত্তি লক্ষ যায়।

৫. ভাষা আন্দোলনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এর সঙ্গে জড়িত নেতৃবৃন্দ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তক। পার্লামেন্টের মধ্যে কংগ্রেসদলীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দ ভাষার দাবিতে কথা বলেন, আর রাজপথে অকংগ্রেসীয়রা ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। ফলে সে সময়ে পূর্ব বাংলায় নিঃসন্দেহে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সামাজিক সম্প্রীতি অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।

৬. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি যাবতীয় সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসন সত্ত্বেও এদেশের সচেতন, শিক্ষিত নারী সমাজ এগিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ছাত্রীরা ঘর থেকে বাইরে বেরোবার সুযোগ লাভ করে। কারণ সে সময়ে মুক্তাঙ্গনে নারীদের পদচারণা ছিল সীমিত। পরবর্তীতে বিভিন্ন সভা-সমিতি, কনফারেন্স, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে নারীদের অংশগ্রহণের এক নতুন ধারা সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে মেয়েরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে থাকে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

৭. ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাবশালী ভূমিকার সূচনা করে। অতীতে এ অঞ্চলে উচ্চ শ্রেণির মাধ্যমেই সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালিত হতে দেখা যায়। ভাষা আন্দোলনই প্রথম পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্ত বাঙালী সমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়।

৮. একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে বাঙালি জাতির প্রাণের আবেগ উচ্ছ্বাসই তাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নিয়ে যায়। একুশের আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রথম দাবী উত্থাপিত হয় ১৯৯৭ সালে একুশের এক অনুষ্ঠানে ময়মনসিং-এর গফরগাঁও থিয়েটারের পক্ষ থেকে। ১৯৯৯ সালে ’অর্ঘম্ব’ নামক একুশে সংকলনে তারা এ দাবী পূনর্ব্যক্ত করে। তবে এক্ষেত্রে কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা প্রেমিক দলের উদ্যোগই প্রধানভাবে ফল বয়ে এনেছিল। এ দলের সদস্য কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামই এক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তাদেরই প্রচেষ্টায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের এক প্রস্তাব ইউনেস্কোতে পৌছে এবং পরবর্তীতে ইউনেস্কোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ফলস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে কমিশন ২-এর অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ঘটনাটি এখানে এ কারণে উল্লেখিত হয়েছে যে, কোন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নয়, বরং একুশের আন্তর্জাতিক মর্যাদার দাবী সর্বপ্রথম উত্থাপিত হয়েছে এদেশের নিতান্ত সাধারণ জনগণের মাধ্যমে। পরবর্তীতে যথাযথ স্থানে প্রস্তাবটি উত্থাপনও প্রথমে ব্যক্তিগত পর্যায়েই হয়েছে। এ দিক থেকে বোঝা যায় একুশের চেতনা এ দেশের সমাজের কত গভীরে প্রবেশ করেছে।

৯. প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহীদ দিবস এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, যা তাদের একই সাথে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

১০. বাঙালির একান্ত ভাষা শহীদ দিবসটি ২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর তাৎপর্য আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করবে জাতিসংঘ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। একথা ঠিক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন এ দিবসটি পালিত হয় তখন তারা তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে, কিন্তু এটা করতে গিয়ে তারা বাংলাদেশ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কেও কোন না কোনভাবে সচেতন হয়। এতে বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও বাঙালি সংস্কৃতির স্বরূপ উদঘাটিত হয়। তাছাড়া দিবসটি পালনের ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়, যা তাদের মধ্যে সামাজিক সংহতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১. একুশের মাসে আমাদের সংস্কৃৃতি, শিল্প-সাহিত্য ও ইতিহাসের যে তাগিদ আমরা অনুভব করি, তা জাতির প্রেরণার বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে।

১২. ভাষা আন্দোলন আমাদের সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে এক বিশাল ভূমিকা রেখেছে প্রধানত এজন্য যে, আমাদের মনের উপনিবেশ মুক্তির পথ নির্দেশ করেছে এই ভাষা আন্দোলন।

১৩. একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের অগ্রবাহিনী ছিল ছাত্র ও যুব সমাজ। অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই এদেশের ছাত্র ও যুব সমাজ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতন হয়, যা একটি জাতির জন্য খুবই তাৎপর্যপূূর্ণ।

ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মূলমন্ত্র। বাঙালি জাতি নিজের ভাষার মর্যাদার জন্য যুদ্ধ করেছে, প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। এভাবেই শহীদদের রক্তের ওপর গড়ে উঠে শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের, শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার যথাযোগ্য মর্যাদা এবং স্থান নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৪. উপসংহার : জাতীয় ভাষা শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কল্যাণে বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে পরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িশা এবং মিয়ানমারের আরাকান জনগোষ্ঠীও বাংলা ভাষায় কথা বলে। ভারতের আসামে এবং সিওরালিয়নে বাংলাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন চলছে। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম ভাগের ৪ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বলা অছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা’। এছাড়া ১৯৮৭ সালে দেশে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনো সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়নি। বিশেষ করে, নিম্ন আদালতে বাংলার ব্যবহার শুরু হলেও উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার না থাকায় সমাজের সাধারণ ও কম শিক্ষিত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তদুপরি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিদেশী মিডিয়ার প্রভাবে বাড়ছে বাংলা ভাষার বিকৃতি। দেশীয় মিডিয়া অবশ্য এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে, তবে তাও সর্বাংশে যথাযথ নয়। এক্ষেত্রে ইংরেজি হিন্দি মেশানো জগাখিচুড়ি বাংলা নয়, বরং সঠিক ও শুদ্ধ বাংলার ব্যাবহার আবশ্যক। বহিঃবিশ্বের সাথে তাল মেলাতে বিদেশী ভাষা শেখা ও চর্চার প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই, তবে তা কোনভাবেই বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। এমতাবস্থায়, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলার বিস্তারে সুস্থ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। সমাজের সচেতন ও অগ্রসর অংশকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে, কেননা পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সর্বোপরি জাতীয় দাবি হিসেবে সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন নিজেদের স্বার্থেই অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি এম এম কলেজ, যশোর।

 

খুলনা গেজেট/এনএম 

 

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!