জাতীয় ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক তুলে দেয়া হয়েছে ২৪ গুণীজনকে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার সকালে বিশিষ্ট নাগরিকদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পদক তুলে দেয়া হয়।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তবে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, আমি সশরীরে উপস্থিত থেকে পদক দিতে পারছি না।’
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গুণীজনদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে।
এ বছর ভাষা আন্দোলনে দুজন, মুক্তিযুদ্ধে চারজন, শিল্পকলায় সাতজন, গবেষণায় চারজন, ভাষা ও সাহিত্যে দুজন, সমাজসেবায় দুজন, সাংবাদিকতা, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একজন একুশে পদক পেলেন।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য এ বছর মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন মোস্তফা এম এ মতিন ও মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল।
মুক্তিযুদ্ধে অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউ এ বি এম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার।
শিল্পকলায় নৃত্যে জিনাত বরকতউল্লাহ, সংগীতে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ শিল্পকলা ও মাহমুদুর রহমান বেনু একুশে পদক পান। অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ এ পদক পেয়েছেন।
সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ এবারের একুশে পদক পান।
সমাজসেবায় এস এম আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাথের এ পদক পেয়েছেন। ভাষা ও সাহিত্যে কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ এবারের একুশে পদক পান।
দলগতভাবে গবেষণায় এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল, ড. মো. এনামুল হক, ড. সাহানাজ সুলতানা ও ড. জান্নাতুল ফেরদৌস।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ওই সময় একুশে পদকজয়ীদের পরিচিত ও তাদের অবদানের কথা পাঠ করে শোনান তিনি।
এই পদকে যারা ভূষিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই একটি পদক, একটি সম্মাননা সনদ, একটি রেপ্লিকা এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য গ্রহণ করেছেন।
নিতুন কুণ্ডুর নকশা করা একুশে পদক ১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে তৈরি। এটির ওজন ৩৫ গ্রাম। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত প্রত্যেককে দেয়া হয় ২ লাখ টাকা।
স্বাগত বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘গুণীজনদের এই অবদান আগামী দিনের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক এই সম্মাননা দিতে বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দপ্তর ও সংস্থা, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সব জেলা প্রশাসক এবং স্বাধীনতা পদক বা একুশে পদকে ভূষিত গুণীজনরা একুশে পদক পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে।
মনোনয়নগুলো যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করে সরকার।
খুলনা গেজেট/এনএম