দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাগরিকের শ্রমের স্বাধীনতা কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৭ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২২-এর জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৩৭তম অবস্থানে। এই তালিকায় ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।
তবে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নাগরিকের ওপর করের বোঝা কমিয়ে আনা এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজে সরকারের ব্যয় ছিল প্রশংসনীয়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাঁচ বছর ধরে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলেও এবার ১৭ ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের সূচকে ৫২.৭ শতাংশ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের বছর থেকে ২.৫ শতাংশ কম।
সূচকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নাগরিকের শ্রম ও সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। অর্থনৈতিকভাবে একটি সমাজে প্রতিটি নাগরিক শ্রম ও ব্যবসায় কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করছে, কর্ম, উৎপাদন, ভোগ এবং যেভাবে খুশি সেভাবে বিনিয়োগ করার স্বাধীনতা পাচ্ছে কি না, এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয় এই সূচক।
শ্রমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় বড় ধরনের ছন্দপতন হয়েছে বাংলাদেশে। ২০২০ সালে শ্রম স্বাধীনতা ছিল রেকর্ড ৬৮.৮ শতাংশ। ২০২১ সালে তা নেমে আসে ৩৬.৬ শতাংশে।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। নেপাল, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ভুটান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শুধু ভুটানের পরে, দ্বিতীয় অবস্থানে। এবার ৯৪তম অবস্থানে থাকা ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যা প্রথম ১০০ দেশের তালিকায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া মানহীন ও বিচ্ছিন্ন নীতিমালার কারণে এ বছরের সূচকে বৈশ্বিক গড় স্কোর কিছুটা কমেছে। এবারের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকের গড় হচ্ছে ৬০ শতাংশ। আগেরবার এর গড় ছিল ৬১.৬ শতাংশ। বাংলাদেশের অবস্থান বৈশ্বিক গড়ের নিচে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ৮০-এর বেশি স্কোর করে শীর্ষ সাতে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও লুক্সেমবার্গ। সূচকে এই দেশগুলোকে রাখা হয়েছে ‘পূর্ণ স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে।
‘প্রায় পূর্ণ স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৭টি দেশকে। ‘মধ্যম স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ ৫৪টি দেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্কোর ছিল ১০০-এর মধ্যে ৫২.৭। তার আগের বছর ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে ১৮৪ দেশের মধ্যে ১২০তম। এর আগে ২০২০ সালের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম।
খুলনা গেজেট/ এস আই