খুলনার কয়রায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনার ফলে শিক্ষার্থী-হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূলভবনের সামনে ঘটনাটি ঘটেছে। এসময় শিক্ষার্থীদের মারপিঠের কারণে তারা মিছিল শুরু করেন। খবর পেয়ে কয়রা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনাস্থল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন বেলা ১২টার দিকে যেয়ে দেখা যায়, ৪/৫ হাজার শিক্ষার্থীকে টানা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কোন ছামিয়ানা কিংবা বসার ব্যবস্থা ছিল না। মূলভবনের ২য় ও ৩য় তলায় টিকা দেয়া হচ্ছিল। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন, ২০ কিলোমিটার দূরের উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন ও ১১ কিলোমিটার দূরের কয়রা সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। দূর থেকে আসা হাজারো শিক্ষার্থী টানা রোদে মূল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত শরীরে অপেক্ষা করছে টিকা গ্রহণের জন্য। মাঝেমধ্যে পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটার ভয় দেখিয়ে তাড়া করছে। আবার কারো শরীরে আঘাতও করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে।
টিকা নিতে আসা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা শিক্ষকদের মাধ্যমে জানতে পেরে ২য় ডোজের টিকার জন্য আসেন। গাদাগাদির মধ্যে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা শুধুমাত্র ছাত্রীদের আগে টিকা দিকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কথাকাটাকাটি হয় হাসপাতালের কর্মীদের সাথে। একপর্যায়ে কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে মারার জন্য হাত উঠিয়ে রুখে আসলে সামনে থাকা শিক্ষার্থীরাও ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন। এসময় তাদেরকে কর্মীরা লাঠি ও হাত দিয়ে আঘাত করেন। এমনকি হাসপাতালের কর্মীরা জুতা দিয়েও তাদেরকে মারপিট করেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীব বালা বলেন, শিক্ষার্থীরা এক কর্মীর সাথে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে চেয়ার তুলে ছুড়ে মারতে উদত্ত হয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তিনি সাথে সাথেই সেখানে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন ও পুলিশে খবর দেন।
অরবিন্দু নামের এক শিক্ষক জানান, হাসপাতালে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর টিকা দিতে আসতে বলার পরেও তেমন কোন প্রস্তুতি ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দূর থেকে শিক্ষার্থীদের এসে রোদের মধ্যে ঘন্টার পর পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে হচ্ছে। আবার টিকা গ্রহণের পরেও তাদের সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। টিকা গ্রহণের পরে নূন্যতম ২/৩ মিনিট বসে বিশ্রাম নেওয়ারও কোন পরিবেশ নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা ১৯ হাজার ৮শ’ ৫০ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হয়। আজ ৪ হাজার ৮৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। প্রথম ডোজ চলাকালীন সময়ে আজকের যে ছয়টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের আসার কথা ছিল সেদিনও ৪ হাজার ৮০ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদীপ বালা বলেন, আজ ৬ টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চলার কথা ছিলো কিন্তু বেশি স্কুলের শিক্ষার্থী চলে আসায় ও কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা ঘটে।
কয়রা থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ও ইউএনও’কে কোনরকম অবহিত করেননি। টিকা নেওয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসে ভিড় করে। সেই জন্য চারটি বুথ করা হয়েছিল সেখানে। কিন্তু ৪টি বুথে এত শিক্ষার্থীর টিকা দিতে দেরি হওয়ায় শুরু হয় বিশৃংখলা। বিশৃঙ্খলা থামাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দেয়। তখন শিক্ষার্থীরা আরও রেগে যায়। এই ঘটনা আমি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। পরে শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। কর্তৃপক্ষ পরে ভুল স্বীকার করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, টিকা দেওয়ার সময় ছাত্রছাত্রীদের সাথে মারামারির ঘটনা আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম। তবে অব্যবস্থাপনার জন্য এরকম ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা অবশ্যই চরম লজ্জাজনক। বিষয়টি আসলে কি ঘটছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই