নদী অর বনের মিশ্রণে মন মাতানো সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ সুন্দরবন। বাঘ, কুমির, হরিণ ও পাখিদের জন্য উপনিবেশ নদী খাড়ি ও বন জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কলগুঙ্জন, গৌধুলিতে ঘরে ফেরা পাখির কাকলি এবং কল কল শব্দে বয়ে যাওয়া নদীর অন্তহীনরুপ আহ কি সুন্দর এই সুন্দরবন! বিজ্ঞানীরা বলেন, সুন্দরবন ‘ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট’ গোটা দুনিয়াই জোয়ার-ভাঁটা নিত্য খেলে এমন জঙ্গল আর কোথাও নেই। সুন্দরবনে অসংখ্য দ্বীপ খাল ও নদী রয়েছে।
ঐতিহাসিক শ্রী সতিষ মিত্রের যশোর -খুলনার ইতিহাস বই হতে পাওয়া যায় ১৭৩৭ সালে সুন্দরবন এলাকায় ঝড়ের সাথে ভূমিকম্পর পর প্রচুর প্রাণহানি হয় । তারপর হতেই সুন্দরবন জনশুন্য হয়। এক সময় বঙ্গদেশের একমাত্র প্রবেশদ্বার ছিল এই সুন্দরবন অঞ্চল। ফলে বর্হিদেশের আক্রমণ থেকে রেহাই পাবার জন্য এই এলাকায় অসংখ্য দুর্গ ছিল। তার মধ্য অন্যতম রায়মঙ্গল দুর্গ। সুন্দরবনের প্রতিটি নদী ও খালের নামের সাথে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত। ইতিহাস বিখ্যাত গাজীকালু চম্পাবতি, বনবিবি, দক্ষীনারায় পদ্মাবতীসহ বিভিন্ন উপাখ্যান রয়েছে এই বনকে ঘিরে। এছাড়া অনেক ওলি দরবেশদের কিংবদন্তি গল্প শোনাযায় এই সুন্দরবনকে ঘিরে। দিনে রাতে চারবার সমুদ্রের পানি ঢুকে জোয়ারে নদীর বুক ভরিয়ে দেয়, আবার ভাটার সময় সেই লবণ পানি সাগরে ফিরে যায়।
সুন্দরবন চারিদিকে নোনাপানির নদী দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ । সৃষ্টিকর্তা নিজের হাতে মনে হয় যেন এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তৈরী করেছেন। সুন্দরবন ভ্রমণের এক পূর্নিমার রাতে ছোট জেলে ডিঙ্গি নৌকাতে এক রাত কাটালে সারা জীবন বহন করার মত স্মৃতি হয়ে থাকে। ইচ্ছা থাকলে ভাল ভ্রমণ কাহিনী এবং গল্পও লেখা যায়। নিস্তেজ, নিঝুম, চাঁদের আলোয় স্রোতস্বিনী নদীর বুকে চাঁদের ঝিকিমিকি জোৎসনার চাদর বিছানো অনির্বচনীয় পরিমন্ডল হয় প্রতি মূহুর্তে প্রাণের ভয়ে অনিশ্চিয়তা মিশ্রণে যে অসহনীয় আনন্দ ও শুন্যতা সৃষ্টি করে তা একমাত্র সুন্দরবনের জঙ্গলে প্রকৃত অর্থে অস্তিত্ব নিয়ে অনুভব করা সম্ভব।
ফলে অতীত কাল থেকে এখানে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। বন্কিম চন্দ্র চট্রোপধ্যায় ১৮৬০-৬৩ সাল পযর্ন্ত খুলনার মহাকুমা ম্যাজিষ্টেট থাকাকালে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ এবং অগম্য সুন্দরবনের পটভূমিতে ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস রচনার সূত্রপাতও হয় এই সুন্দরবনে।
আজ সেই সুন্দরবন দিবস। খুলনার একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ১৪ ফেব্রুয়ারীকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে । এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশ্ব ভালাবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসুন।’
খুলনা গেজেট/ টি আই