নগরীতে পাইকারী ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের কথার মিল নেই। পাইকারী ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকার কথা স্বীকার করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দ্বৈত ব্যবসা নীতির কারণে অতিরিক্ত মূল্য দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আর এ মূল্যে চাল কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের।
খুলনা নগরীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, মিনিকেট ভালমানের চাল প্রতিকেজি ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মাঝারি মানের চাল ৬২ টাকা, স্বর্ণা ৪৬ টাকা, ইরি ২৮ বালাম ৪৮ টাকা, বাসমতি ৬৭ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে মিনিকেট ভালমানের চাল ৫৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অনুরূপভাবে মাঝারি মানের ৫৮ টাকা, স্বর্ণা ৪০ টাকা, ইরি ২৮ বালাম ৪৪ টাকা ও বাসমতি ৬২ থেকে ৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নগরীর দোলখোলার চাল ব্যবসায়ী মো: কামরুল ইসলাম জানান, একসপ্তাহ ধরে চালের বাজার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তার কোন প্রভাব পড়েনি চালের বাজারে। ব্যাপারীরা প্রতিসপ্তাহে হাটে ধানের দাম বাড়ার শুনান দেয়। কি কারণে চালের দাম বাড়ছে তার সঠিক উত্তর জানেন না। তবে এর পেছনে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কারিসাজি আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সেজন্য বাজার থেকে বেশী দরে কিনে তাকে এ মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রূপসা বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, গত চারমাস ধরে ভারতীয় চালের আমদানি কম। বাজারে চিকন চালের সংকট রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণ চাল মজুদ আছে তাতে দেশের মানুষের তিনমাসের খোরাক মিটবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বড় বাজারের মেসার্স কুন্ডু এন্টারপ্রাইজের কর্ণধর বাসুদেব কুন্ডু চালের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, গত দেড় মাস ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। বাজরে চালের দাম বাড়েনি। তিনি বলেন, ক্রেতাদের একটি অংশ মোটা চাল খেতে চায়না। অধিকাংশ চিকন চাল খোঁজে। গত চারমাস ধরে বাজারে এলসি চালের আমদানি নেই। যা আছে তা দিয়ে নগরবাসীর চাহিদা মেটানো অসম্ভব। মানভেদে সরু চাল ৪৭ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তার আড়তে ।
মেসার্স দিনাজপুর ভান্ডরের মালিক মো: ফারুক হোসেন বলেন, চালের ব্যবসা এখন ভারত নির্ভর হয়ে গেছে। এলসি চালের আমদানি বন্ধের একমাস পর থেকে এ পণ্যটির দম বেড়ে যায়। গত দেড়মাসের বেশী সময় ধরে বাজার উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি কুড়োপাড়া, কুষ্টিয়া, নাটোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন মিল থেকে চাল ক্রয় করেন। গত দু’মাস ধরে ব্যাপারীদের নিকট থেকে জেনেছেন তাদের কাছে কোন ধান নেই। মিনিকেট মূলত: ইরি জাতীয় ধান হতে চাল হয়। আগামী আড়াই মাস পর এ ধানের ফলন হবে। সে সময় দাম কমতে পারে।
বড় বাজারে চাল ক্রেতা নব দুলাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোক্তা অধিকার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ বাজার তদারকি করা। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা অবহেলা করছেন।