জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঁচ দিনব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ জেনেভায় শুরু হতে যাচ্ছে। জেনেভায় গ্রুপের ১২৬তম বৈঠকে বিভিন্ন দেশের গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হবে। যেসব দেশের গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হবে সেসব দেশের সরকারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হবে। তবে গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের পাঁচ সদস্যের গোপন বৈঠকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। যদিও গ্রুপটির গত বৈঠকে বাংলাদেশের ৭৬টি গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের জবাব জানতে চাওয়া হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে খুব কম ঘটনার জবাব দেওয়া হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল হলো জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা। এর সদর দপ্তর জেনেভায়। গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিশ্বের খ্যাতিমান পাঁচ বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত। তারা কোনো নির্দিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসাবে নন; বরং স্বাধীন বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিযুক্ত হন। গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ এ সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। গ্রুপটি কোনো দেশের কাছ থেকে সরকারিভাবে তথ্য সংগ্রহ করে না। বরং গ্রুপটি নিজস্ব সূত্রে বিভিন্ন দেশের গুমসংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে। যেসব দেশে গুমের তথ্য পায়; সেসব দেশের সরকারের কাছে গ্রুপটি তথ্যগুলো পাঠিয়ে তার প্রতিকার আশা করে। পাশাপাশি, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ওই সব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গুমসংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে কিনা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রুদ্ধদ্বার বৈঠক হওয়ায় কমিটি এজেন্ডা প্রকাশ করে না। তবে আলোচনার পর গ্রুপের পর্যালোচনা প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এবারও বৈঠকের পর ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এরপর তা জানা যাবে। যেসব দেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে সেসব দেশের সরকারের কাছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন শেয়ার করা হবে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা জেনেভায় থাকেন না। বৈঠকে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা জেনেভায় হাজির হন। বছরে তিনবার বৈঠকে তারা মিলিত হন। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ বৈঠকে বাংলাদেশের ৭৬টি গুমের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের কাছেও মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেশ করা হয়।
ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো আলোচনা হলে জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন সেগুলো সংগ্রহ করে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওয়ার্কিং গ্রুপের কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটির জবাব দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোনো ঘটনার বিষয়ে সরকারের জবাব থাকলে তা স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে ওয়ার্কিং গ্রুপের কাছে উপস্থাপন করা হয়। গ্রুপের প্রতিবেদনে কোনো ভুল তথ্য থাকলে তাও তুলে ধরা হয়। গত বছরে ওয়ার্কিং গ্রুপের উত্থাপিত ৭৬টি গুমের ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কয়েকটির ব্যাপারে জবাব দিয়েছে।
বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় র্যাব এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্যও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। এসব ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, গুমের ঘটনার শিকার বলা হলেও অনেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন।