খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ

খুলনায় ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের চরম মানবেতর জীবন

শেখ বদর উদ্দীন

খুলনা মহনগরী, জেলা ও উপজেলাতে ৭৫৬ টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে । এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন প্রায় দশ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। খরচ চালাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। নগরীর কুয়েট সড়কেই ছিলো বেশকয়েকটি কিন্ডারগার্টেন। ভোর হলেই সড়কটি শিশু-কিশোরদের পদচারণে সরব হয়ে উঠত। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এ চিত্র বদলে গেছে। ৩ বছর ধরে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন । আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার নিয়ে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন প্রায় দশ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের বেতন-ভাতায় খাবারের জোগান হতো পরিবারের প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার সদস্যের। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করতে পারেনি। ফলে অর্থের অভাবে মালিকেরা ইতিমধ্যে বেশকয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা এখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেননি, তারা ঋণে জর্জরিত।

নগরীর খানজাহান আলী থানার মাত্তমডাঙ্গা সড়কের পাশের একটি ভবনে মাতৃভূমি কিন্ডারগার্টেন ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন নেই। ভবনটিতে এখন একটি এনজিওর কার্যালয়। এর কয়েকটি ভবনের পরই ছিল লিটল কামাল কিন্ডারগার্টেন। ভবনটিতে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডই ঝুলছে, ভেতরটা পুরো ফাঁকা। সারা দিন শিশু-কিশোরের হইহুল্লোড়ে মুখর থাকত যে প্রতিষ্ঠান, তা এখন জনমানবশূন্য। পাশের মহল্লার একটি ভবনে ছিল সোনারমনি কিন্ডারগার্টেন । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ওই ভবনে কয়েকটি পরিবার কক্ষ ভাড়া নিয়ে বাস করছে।

কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ জানান, করোনা শুরুর পর তিনি প্রায় এক বছর প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। বাড়িভাড়া বাকি থাকায় আর টিকিয়ে রাখতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাব বিক্রি করে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করেছেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন ১৬ শিক্ষক-কর্মচারী।

নগরীর খানজাহান আলী থানার গিলাতলা ৫ নং ওয়ার্ডের আইডিয়াল প্রি ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, সুনামের সঙ্গে ও লাভজনকভাবেই প্রতিষ্ঠানটি চলছিল। এখন ঋণ করে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এভাবে আর কিছুদিন চললে বসতভিটা বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হবে।

কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় গিলাতলা পাকারমাথা এলাকার আজিজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, আমরা খুব বেকায়দায় রয়েছি। খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি। না পারি কিছু করতে, না পারি বলতে; খোঁজ নেয়নি কেউ। লজ্জায় না পারি হাত পেতে চাইতে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়া আরও অন্তত কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বেতন-ভাতার পাশাপাশি টিউশনি করে তাদের কিছু আয় হতো, যা দিয়ে সংসার চলত। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেতন দিচ্ছে না। অনেকে ধার করে ও পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। মানবিক দৃষ্টিতে হলেও সামনে পবিত্র মাহে রমজান । পুর্বের কয়েকটি মাহে রমজান ও ঈদের মতোই এবারও কিন্ডারগার্টেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো ন্যূনতমভাবে এ আনন্দ পালন করতে ব্যর্থ হবে। তাই সরকারের সদয় ও কার্যকরী পদক্ষেপই পারে কিন্ডারগার্টেনগুলোকে রক্ষা করতে। সরকারের আমাদের জন্য কিছু করা দরকার। এই ক্লান্তিকালে সহায়তা পেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো বলেও জানান এই সেক্টরে কাজ করা শিক্ষক-কর্মচারীরা।

ল্যাবরেটরী স্কুলরোড সংলগ্ন প্রতিভা প্রি ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান (মিজান) বলেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, বেড়েছে শিশুশ্রম ।

মিরেরডাঙ্গা কেডিএ আবাসিক এলাকার কবির একাডেমির পরিচালক মোঃ কবির হোসেন বলেন দেশের সব ছোটবড় শপিংমল বা বিপণি-বিতানে নিয়মিত কেনাকাটা চলছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় জনসমাগম কিছুটা কমলেও খোলা রয়েছে সব কিছু। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। বর্তমান এবং আগামীর প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কাজী জলিল বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হলেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে কেউ নজর দেয়নি। ওমিক্রনের প্রভাবে সরকারি আদেশে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই ছুটি না কাটতেই নতুন করে দেওয়া হলো আরো দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ। সবকিছুই সচল, অচল কেন শিক্ষাঙ্গন?

তিনি ক্ষোভ নিয়ে আরও বলেন, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার-ঘাট খোলা কিংবা বাণিজ্য মেলা চলছে সেই স্বাস্থ্যবিধির আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা রাখা যায় না? বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত, সেখানে সেশনজট রোধ, মাদকাশক্তির ঝুঁকি এবং আত্মহত্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখতে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরুর কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন ।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!