বাইরে এবং ভিতরে চাকচিক্য পরিবেশ। বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন। বাইরের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনবল সংকটের কারণে জর্জরিত। অত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ জনবল সংকট যুগ যুগ ধরে চলে আসলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই। ফলশ্রুতিতে এই উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভৈরব, আতাই, আঠারোবাকী এবং মজুতখালী নদী বেষ্টিত খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা।
খুলনা মহানগরীর আওতাভূক্ত আড়ংঘাটা ইউনিয়ন ও খানজাহান আলী থানার আওতাভূক্ত যোগীপোল ইউনিয়ন এবং খুলনা জেলার আওতাভূক্ত ৪ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে দিঘলিয়া সদর, সেনহাটী, বারাকপুর এবং গাজীরহাট ইউনিয়ন নিয়ে দিঘলিয়া উপজেলা গঠিত। ৬ টি ইউনিয়ন নিয়েই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। দ্বীপ বেষ্টিত এ উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে কোন হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক গড়ে উঠে নাই। ৪ টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাস ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ১৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ৫০ টি বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হতে রোগীদের অনীহা রয়েছে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে জনবল সংকট যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বর্তমানে ৫ জন মেডিকেল অফিসার, ওয়ার্ড বয় এবং নার্স দিয়ে হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালের দোতলায় ১টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নেই কোন সার্জারি ডাক্তার। এক্সরে মেশিন রয়েছে কিন্তু এটি পরিচালনার জন্য নেই কোনো রেডিও গ্রাফার। নেই কোন গাইনী বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল সার্জন। এ্যানেচথেশিয়া বা অজ্ঞান করার বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তারের পোষ্টিং থাকলেও অপারেশনের কোন কার্যক্রম না থাকার কারণে তিনি অন্যত্র প্রেশনে কাজ করছেন। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য ১টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে কিন্ত কোন ড্রাইভার নেই। আউটসোর্সিং এর এক জনকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো হচ্ছে।
জরুরী বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এর তত্ত্বাবধানে অফিস সহায়ক এবং আউট সোর্সিং এর ওয়ার্ড বয় দ্বারা এটি পরিচালিত হচ্ছে। গুরুতর রোগী আসামাত্র তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দ্বীপ বেষ্টিত এ উপজেলা সদরসহ ৪ টি ইউনিয়নের কোথাও কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল কিম্বা ক্লিনিক না থাকার কারণে এ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে যুগ যুগ ধরে এ এলাকার মানুষ তাঁদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন সাড়ে ৩’ শ থেকে ৪’শ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে অত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসে। গত ডিসেম্বর মাসে খুলনা জেলার ৯ টি উপজেলার মধ্যে অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বহির্বিভাগে সর্বোচ্চ রোগী সেবা নিতে এসেছে। বহির্বিভাগে আগত একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সেবার ব্যাপারে তাদের কিছুটা অভিযোগ থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রাপ্তিতে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেক সংকটের মাঝেও কিছুটা আশার বাণী শোনালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহাবুবুল আলম। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, খুব দ্রুতই আমরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের জন্য আল্ট্রাসনো সেবা চালু করবো। তিনি বলেন, আমরা বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের ৩২ প্রকার ঔষুধ প্রদান করে থাকি। ভর্তিকৃত রোগীদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার ওষুধ আমরা সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৩২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। স্বল্প জনবল নিয়েও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে টাইম টু টাইম অবহিত করছি।
খুলনা গেজেট/ টি আই