পাইকগাছার কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে তারই এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগের পর অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে বিভিন্ন স্থানে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
ঘটনায় কলেজ এর অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শাতে ৭ দিনের সময় দিয়ে শোকজ করেছেন। যার শেষ কার্যদিবস আগামী শনিবার(২২ জানুয়ারি)।
এদিকে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সৌমিত্রর পক্ষে মাঠে নেমেছে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা কর্তৃপক্ষসহ অভিযোগকারী ছাত্রী ও তার পরিবারকে ম্যানেজ করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ছাত্রীর পক্ষে অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহারের জন্য দফায় দফায় তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পক্ষে বিভিন্ন সময়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে উল্টো একটি প্রতিবাদলিপি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজটির নির্ভরশীল দায়িত্বশীল সূত্র।
সব মিলিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে মহলটি চাইছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের আগেই বিষয়টির নিষ্পত্তিকরণে ছাত্রীর পক্ষে অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহারের।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কপিলমুনি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জনৈকা মেধাবী ছাত্রী তারই পদার্থ বিজ্ঞানের শ্রেণী ও কোচিং শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ ও সভাপতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন যে, পরীক্ষার আগে ঐ শিক্ষক তাকে তার কোচিং সেন্টারে একা পেয়ে শ্লীলতাহানী ঘটান।
ঘটনায় ঐসময় অভিযোগকারী ছাত্রী বিষয়টি নিয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডলকে মৌখিক অভিযোগ করে। যার প্রেক্ষিতে উপাধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক সৌমিত্রসহ অপর সিনিয়র শিক্ষক পরিমল সাধুকে সাথে নিয়ে ঐ ছাত্রীর বাসায় যান। এবং বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা করেন।
এসময় তিনি সৌমিত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে নিয়ে ফিরে আসেন।
এব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, ঘটনার সময় তিনি কলেজের কাজে ঢাকায় ছিলেন। তবে পরষ্পর শোনার পর সৌমিত্রকে মৌখিকভাবে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার যান।
সর্বশেষ সম্প্রতি ডাকযোগে তার কাছে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। এরপর তিনি গত ১৫ জানুয়ারী সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত শিক্ষককে ৭ কার্যদিবসের সময় দিয়ে সন্তোষজনক জবাবদানে একটি শোকজ করা হয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারী নোটিশের মেয়াদ শেষ হবে। এর পর পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডল জানান, খবর পেয়ে তিনি সৌমিত্র ও অপর সিনিয়র শিক্ষক পরিমল সাধুকে নিয়ে অভিযোগকারী ছাত্রীর বাসায় যান। ঐদিন বিষয়টির মিমাংশা করে ফের চলে আসেন। তার কাছে বিষয়টি ভূল বুঝা-বুঝি বলে মনে হয়েছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সৌমিত্র জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। বিষয়টি ভূল বুঝাবুঝির পর্যায়ে ছিল।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নির্ভরশীল সূত্র জানায়, কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ও উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের সুনীল সাধুর ছেলে সৌমিত্র সাধু শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় মটরসাইকেল স্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘ দিন যাবৎ একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন।
ছাত্রীর অভিযোগ, সে তার কাছে গত প্রায় ৪ বছর ধরে কোচিং করছে। গত বছর তার পিতার মৃত্যুর পর পরীক্ষার আগে তার উপর উক্ত শিক্ষকের কু-নজর পড়ে। ঘটনার দিন অন্যান্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে শিক্ষক সৌমিত্র তার শ্লীলতাহানীর অপচেষ্টা করেন। ঐসময় সে বিষয়টি উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডলকে জানালে বিচারের আশ্বাস দিলেও তার বিচার না হওয়ায় পরীক্ষার পর সে অভিযোগটি করেছে।
সর্বশেষ বিষয়টিকে ধামাচাপা কিংবা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে অভিযোগকারী ছাত্রীকে দিয়ে তার অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহারের অপচেষ্টা চলছে। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।