খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

জলবায়ু পরিবর্তনে পাইকগাছা-কয়রার জনজীবন হুমকিতে

পাইকগাছা প্রতিনিধি

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা-কয়রা অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। নিয়ম করে বছরের বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে নদ-নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব কারণে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে গাছ-পালা, নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষি উৎপাদন।

এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একদিকে যেমন কর্মহীন হয়ে পড়ছে অন্যদিকে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর পেশাবদল করছে বহু মানুষ। অনেকে আবার নতুন কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এক কথায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সামনে জীবিকার তাগিদে রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের।

বৈষ্ণিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে আশংকাজনক হারে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর কোন না কোন দুর্যোগ আঘাত হানছে এ অঞ্চলে। সিডর, আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগেই গত ২ বছরে ৩টি বড় ধরণের দূর্যোগ আঘাত হেনেছে এলাকায়। এতে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।

সময়ের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়েছে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নদী। যার মধ্যে কপোতাক্ষ, শিবসা ও হাড়িয়া নদী অন্যতম। পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার মুখে বৃষ্টির মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় দু’উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। আর এ সুযোগে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়ে লবণ পানি। এসব নদ-নদীর মাধ্যমে সমুদ্রের উগলে দেওয়া পানি ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষাবাদের ফলে বিভিন্ন পোল্ডারের অভ্যন্তরে অবাধে অনুপ্রবেশ ঘটছে লবণ পানির। এতে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাসের পাশাপাশি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীব ও প্রাণী বৈচিত্রের।

উপজেলার লতা ইউনিয়নের গঙ্গারকোনা গ্রামের অধিবাসী আদিত্য সরকার জানান, এলাকায় সুপেয় পানির তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এতে শ্রমের পাশাপাশি সময় অপচয় হয়। এছাড়া লবণ পানির বিরুপ প্রভাব, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের উপচে পড়া পানিতে বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি ঘর-বাড়িসহ কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে ও হচ্ছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। লবণ পানির আধিক্যে ইতোমধ্যে হারিয়ে গিয়েছে অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছ। বিভিন্ন সময়ের দুর্যোগের মুখে পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় দূষণে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের রোগ-বালাই।

ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতে ইতোমধ্যে সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিলেও ঠিক কবে নাগাদ এর বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা। প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখে তৃণমূলের সচেতনতাবৃদ্ধিতে ২০১৮ সাল থেকে দু’ উপজেলায় স্টোক হোল্ডারদের মাধ্যমে পানিই জীবন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের ক্ষয়ক্ষতি রোধ, সহায়তা প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে জিও-এনজিও পর্যায়ে কাজের পাশাপাশি প্রয়োজন পরষ্পরের সমন্বয় সাধন। এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে নিয়ে দরকার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।

এপ্রসঙ্গে উপজেলার দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল বলেন, তাদের ইউনিয়নটি একটি দ্বীপবেষ্টিত অঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে প্রতিনিয়ত সেখানে বাড়ছে নানা সংকট। বিশেষ করে পরিবেশ ধ্বংশের পাশাপাশি সেখানকার বৃহৎ সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই প্রতিবছর অন্যত্র চলে যাচ্ছে এক প্রকার বাধ্য হযে। এজন্য জিও-এনজিও পর্যায়ে দরকার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার।

যার মধ্যে তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির উৎস তৈরী, টয়লেটের প্লাটফর্ম উচু এবং উন্নত করা, স্থানীয় সরকার ও সরকারের জলবায়ু মোকাবেলায় অর্থায়ন বাড়ানো, পর্যাপ্ত ড্রেন, কালভার্ট ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণসহ কৃষি ক্ষেত্রে লবণ সহিষ্ণু বিভিন্ন ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন। এজন্য তিনি উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনেরও পরামর্শ দেন।

নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-মান সমুন্নত রাখতে জিও-এনজিও পর্যায়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে দাবি জানান তৃণমূলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!