খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

র‌্যাবকে নিষিদ্ধের আহ্বানে জাতিসংঘে ১২ সংগঠনের চিঠি

গেজেট ডেস্ক

জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জ্যাঁ পিয়ের ল্যাক্রোইক্সকে একটি চিঠি দিয়েছে ১২টি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন। ওই চিঠিতে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশন্সের উচিত বাংলাদেশের এই আধাসামরিক বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা। বিষয়টি আজ ২০শে জানুয়ারি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এতে বলা হয়েছে, র‌্যাবের ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো প্রামাণ্য হিসেবে তুলে ধরেছে। এই বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলেছে, প্রায় দুই মাস আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের কাছে ‘প্রাইভেটলি’ পাঠানো হয়েছে ওই চিঠি। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উত্তর দেয়নি জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন্স।

রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ যদি শান্তিরক্ষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করায় গুরুত্ব দেন, তাহলে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, নির্যাতনের প্রামাণ্য রেকর্ড আছে র‌্যাবের মতো এমন ইউনিটকে মোতায়েনের বাইরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ পরিষ্কার।
এখন এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সীমারেখা টানার সময় এসেছে।

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাবকে একটি বিদেশি ‘এনটিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যারা গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস একাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, জড়িত।

কিন্তু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বিরুদ্ধে অস্বীকৃতি এবং প্রতিশোধমূলক আচরণ করেছে। জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা রিপোর্ট করেছেন যে, তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন কর্মকর্তারা। তারা তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। তাদেরকে মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন। সেসব বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, তাদের পরিবারের সদস্যকে জোরপূর্বক গুম করা হয়নি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন।

৫ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অ্যান্ড ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে আগে তদন্ত ছাড়া বা ভেটিং প্রক্রিয়া ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী অপারেশনে র‌্যাবের সদস্যদের অংশগ্রহণ বৈধ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। ওই ওয়ার্কিং গ্রুপ আরও বলেছে যে, যেসব কর্মকর্তা নির্যাতনে জড়িত বা যারা এসব নির্যাতন বরদাস্ত করেছেন, দৃশ্যত তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীতে পদোন্নতি পেয়েছেন বা পুরস্কৃত হয়েছেন।

২০২১ সালের মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিচেল ব্যাচেলেট বলেছেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অশোভন আচরণের অভিযোগ দীর্র্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে। কমিটি এগেইনস্ট টর্চার তার কনভেনশন এগেনইস্ট টর্চারের অধীনে বাধ্যবাধকতায় বাংলাদেশের ওপর ২০১৯ সালের পর্যালোচনার উপসংহারে বলেছে, র‌্যাবে চাকরি করছেন এমন ব্যক্তিদের ঘন ঘন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে মোতায়েন করা হয়, যা উদ্বেগজনক।

জাতিসংঘের কমিটি এগেইনস্ট টর্চার সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সামরিক এবং পুলিশ সদস্য, যাদেরকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে মোতায়েন করা হবে তাদের বিষয়ে যথাযথ একটি স্বাধীন যাচাই প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা আরও নিশ্চয়তা দিয়েছে যে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত কোনো ইউনিটের কোনো ব্যক্তি বা ইউনিটকে নির্বাচিত করা হয়নি।

এরই মধ্যে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান প্রধান বেনজীর আহমেদ। জাতিসংঘে তার চাকরি করার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এটা এমন এক সময় যখন তার কমান্ডের অধীনে থাকা কর্মকর্তারা ১৩৬ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন। ১০ জনকে জোরপূর্বক গুম করেছেন বলে অভিযোগ আছে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ভি ল্যাডসোস এ সময়ে তাকে ‘এক্সটারনাল রিভিউ অব দ্য ফাংশন্স, স্ট্রাকচার, অ্যান্ড ক্যাপাসিটি অব দ্য ইউএন পুলিশ ডিভিশনের’ একটি নিরপেক্ষ রিভিউ টিমে একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যা ও বানোয়াটের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, যেসব মানুষ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন, তারা ‘আমাদের সরকার এবং আমাদের দেশকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন’। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার জবাবে র‌্যাবের উপ-প্রধান কেএম আজাদ বলেছেন, যদি অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, তাহলে দেশের স্বার্থে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচে জাতিসংঘের পরিচালক লুইস চারবোনেউ বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে র‌্যাবের সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়টি একটি বার্তা দেয়। তা হলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একজনকে জাতিসংঘের চাকরি থেকে যদি বিরত রাখা না হয়, তাহলে জাতিসংঘ মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে যেসব দেশ শান্তিরক্ষী নিচ্ছে এবং যারা এতে সেনা পাঠাচ্ছে, তাদেরকে জাতিসংঘের একটি স্পষ্ট সংকেত দেয়া উচিত। তা হলো- নিপীড়ক ইউনিটগুলো জাতিসংঘের অংশ হতে পারবে না।

জাতিসংঘের কাছে লেখা ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য এডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!