খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

ওরা অন্ধকারে আলো জ্বালাতে চায়

এস এস সাগর, চিতলমারী

অন্ধকারে আলো জ্বালাতে চায় ওরা। ওরা সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে চায়। চায় পরিবারে অবহেলিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুটির প্রতি অবহেলা কমাতে। তাই তো প্রতিদিন বাড়ি থেকে গাড়িতে বিদ্যালয়ে এনে মায়ের মমতায় দেওয়া হয় পাঠদান। আর এ জন্য বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে গড়ে উঠেছে আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষা গ্রহণ করছে ৩৩৮ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী।

আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. হায়াত আলী হাওলাদার বলেন, একালার অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা ভেবে এবং তাঁদের প্রতি পরিবারের ব্যবহার দেখে আমার হৃদয় ব্যকুল হয়। তাই এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত যুবকের সাথে আলাপ আলোচনা করে ২০০৮ সালে উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া গ্রামে ‘আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি’ গড়ে তুলেছি। এ জন্য নিজের ২১ শতক জমি স্কুলের নামে দান করি। শুরু থেকেই নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চলছে স্কুলটি। বর্তমানে এখানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ৩৩৮ জন। এরমধ্যে শিশু শ্রেণীতে ৮৯ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৮৬ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৪৬ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫৪ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৩৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২৪ জন। শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। আয়া ৭ জন, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক ২ জন এবং ইজিবাইক ও ভ্যানচালক ৬ জন।

অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ৩ টি আধাপাঁকা টিন সেডের ঘর। যার ৮টি কক্ষ। যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ৩টি ইজিবাইক ও ২টি ব্যাটারি চালিত ভ্যান। এই পরিবহনে করে প্রতিদিন উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে এনে যত্নের সাথে পাঠদান করা হয়। আর শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দুপুরে দেওয়া হয় দুপুরের খাবার। স্কুলের ২৫ জন স্টাফ ১৪ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিম আক্তার ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মো. সাব্বির শেখ বলেন, আয়ারা আমাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে করে স্কুলে নিয়ে আসে। স্যাররা আমাদের যত্নের সাথে পড়াশুনা শেখান। আমরা স্কুলে এসে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমরা চাই আমাদের স্কুলটি যেন বন্ধ হয়ে না যায়।

ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষক নার্গিস পারভিন, বাবুল বিশ্বাস ও মুক্তা আক্তার বলেন, আমরা এই স্কুলের দীর্ঘদিনের শিক্ষক। আমরা এই বাচ্চাদের নিয়ে ক্লাস করে আসছি। তাঁদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা ওদের জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি। আমরা চাই স্কুলটা যেন বন্ধ না হয়ে যায়। আমরা যেন ওদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে পারি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা বিনা বেতনে শিক্ষা দান করে যাচ্ছি। এখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা একটা পর্যায়ে এসেছে। তাঁদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হলে এখন স্কুলটি এমপিওভুক্ত হওয়া দরকার।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, আমরা আড়ুয়াবর্ণী চরপাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। ওখানে বিভিন্ন শ্রেণীর ৩৩৮ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা তাঁদের দেখেছি। তাঁরা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাঁরা আমাদের বিভিন্ন গান, নাচ ও গজল পরিবেশন করে শুনিয়েছে। বিষয়টি আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরাও চাই স্কুলটি সামনের দিকে এগিয়ে যাক।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!