নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে, ততোই উত্তেজনা ও আগ্রহ বাড়ছে প্রার্থী, কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর এক বক্তব্যে এখন আলোচনা বেশ জমে উঠেছে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী বলে দাবি করেছেন আইভী। সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাপাড়া এলাকায় শনিবার নির্বাচনি প্রচারে নেমে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেন তিনি।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তৈমূর আলম খন্দকারকে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় আইভীর অভিযোগ, ‘উনি (তৈমূর আলম) অন্য কারও প্রার্থী নন। উনি বিএনপিরও প্রার্থী না; স্বতন্ত্র প্রার্থীও নন।
তৈমূরকে শামীম-সেলিমের প্রার্থী দাবি করে আইভী আরও বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব পরিষ্কার হয়েছে কি না জানি না, কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবাই আমার সঙ্গে আছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে এবং তারা আমার জন্য কাজও করছে। একমাত্র সে (শামীম ওসমান) বাইরে গিয়ে তার লোকজনদের প্রোভাইড করছে।’
অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার আজ বলেছেন, “আইভীকে নাকি কেউ সাপোর্ট দেয় না। এখানে আমি কী করব! তাদের এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা তাকে সাপোর্ট না দিলে সেখানে আমার করার কিছু নেই। সিটি করপোরেশনে অতিরিক্ত তিন-চার গুণ ট্যাক্স দিতে গিয়ে তো তারাও ভুক্তভোগী।”
শনিবার সকালে সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালকুড়ি এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তৈমূর।
সাংসদ শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সমর্থন চান জানিয়ে তৈমূর বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে যারা এমপি আছেন আমি তাদেরও সমর্থন চাই। আমি মাঠে নেমেছি। জনগণসহ সবার সমর্থন চাইছি।’
স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, ‘শামীম ওসমান যখন ছাত্রনেতা, তখন আমি নারায়ণগঞ্জে একজন ডাকসাইটে শ্রমিক নেতা। আমি শামীমের পায়ে হাঁটি না। আমি নিজস্ব জনশক্তিতে হাঁটি। এখন কেউ যদি মনে করে নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের চাহিদা পূরণের জন্য আমাকে প্রয়োজন, তারা যদি মনে করে তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিরাপদ, তাহলে তারা সে অনুযায়ী কাজ করবে।
‘আমার পক্ষে নারায়ণগঞ্জের সব স্তরের মানুষ নেমে এসেছে। তাদের কাছে ভোট চাইছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের ভোটার হলে তার কাছেও ভোট চাইতে যেতাম। আমার বিশ্বাস, গত ৫০ বছরে আমার স্বচ্ছ, নির্ভেজাল গণমুখী কর্মকাণ্ড দেখে তিনি আমাকে ভোট দিতেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তৈমূর বলেন, ‘আমি বিএনপির লোক কি না তা নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করেন। বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেনি। তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে সব দলের সমর্থন যেন পাই।’
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘দুদিন আগে ভাই ছিলাম এখন কেন গডফাদার হলাম! এ প্রশ্ন আপনারা আইভীকে করেন। তিনি কীভাবে এ কথা বলেছেন। আইভী আমাকে গডফাদার বলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি আঙুল তুলেছেন।’ আজ শনিবার সন্ধ্যায় আইভীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমতে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। শামীম ওসমান বলেন, ‘দুদিন আগে একটি ভিডিও দেখলাম, সেখানে উনি (আইভী) বলছেন, শামীম ওসমান আমাদের নেতা। উনি বড় ভাই, আওয়ামী লীগের সাংসদ। দুই দিনের মধ্যে গডফাদার হয়ে গেলাম। আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমার দল। আমি যদি গডফাদার হই, তাহলে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন কে? কাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো? যে বলেছে, তাঁর (আইভী) কাছে জিজ্ঞেস করেন, আপনি দুদিন আগে এটা বলেছেন, দুদিন পরে এটা বললেন। কোনটা সঠিক।’
এ সময় শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘আমি কোনো সাবজেক্ট না। প্রথমদিক থেকেই চুপচাপ ছিলাম। এখনও আছি। তাহলে আমি নিউজ হব কেন? যারা আমাকে নিউজ বানাতে চাচ্ছেন। আমি তো তাঁদের বলেছি, কারণটা কী। এখন উনারা যদি কেউ ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন, তাহলে আমার দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে তা জানানো। জনগণ যদি সেটা সঠিক মনে করে, তাহলে সঠিক। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত বিষয়, কোনো রাজনৈতিক নয়।’ আইভীর এমন অভিযোগের জবাবে দুই-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করবেন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘এগুলো নিয়ে এখন এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। শনিবার ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এতে কমিটি বিলুপ্তির কারণ হিসেবে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কমিটি বিলুপ্তির কারণ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে চলা দ্বন্দ্বকে বড় করে দেখা হচ্ছে।
২০১৮ সালের ১০ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আশরাফুল ইসমাইল রাফেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাসনাত রহমান বিন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় ছাত্রলীগের মহানগরের নেতারা তেমন সরব নন— অভিযোগ আইভীপন্থিদের। মাঝে একদিন প্রচারণা করলেও তাদের আর দেখা যায়নি।
খুলনা গেজেট/ টি আই